বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: হৃদরোগে আক্রান্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সিঙ্গাপুর পৌঁছেছে। পরে তাঁকে দেশটির মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত সচিব গৌতম চন্দ্র জানিয়েছেন, মন্ত্রীকে বহনকারী সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে সেলেটার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে মন্ত্রীকে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।
একই কথা জানান সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। কাদেরের সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ইশরাতুন নেসা কাদের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক ডা. আবু নাসের রিজভী ও মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসক প্রতিনিধিদল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধিদল বিমানবন্দরে কাদেরকে বিদায় জানায়।
ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ওবায়দুল কাদেরকে দেখেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের তিন সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আসে এবং ওবায়দুল কাদেরকে পরীক্ষা করে।
ওবায়দুল কাদের গত রোববার সকালে শ্বাসক্রিয়ার জটিলতা নিয়ে বিএসএমএমইউর করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর এনজিওগ্রাম করে তাঁর করোনারি ধমনীতে তিনটি ব্লক পান চিকিৎসকরা। যার মধ্যে একটি ব্লক অপসারণও করা হয়।
সোমবার সকালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ সাংবাদিকদের জানান, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এখন তাঁর অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। আমি চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেছি। সেরে ওঠার ব্যাপারে তারা (চিকিৎসকরা) আশাবাদী।’
বার্তা সংস্থা বাসসের এক খবরে বলা হয়েছে, আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ভারতের প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডা. দেবী শেঠির বক্তব্য উদ্ধৃত করে সাংবাদিদের বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরকে চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত যা কিছু করা হয়েছে, তা সঠিক।’
উপাচার্য বলেন, ‘তাঁর (কাদের) শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তবে শঙ্কামুক্ত নন। আমরা ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার সর্ব শেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণে ডা. দেবী শেঠির পরামর্শের অপেক্ষা করছিলাম। ডা. শেঠি সোমবার দুপুর পৌনে ১টায় বিএসএমএমইউর সিসিইউতে এসে পৌঁছান এবং চিকিৎসাধীন ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে তাঁকে বিদেশে হৃদরোগ সংক্রান্ত বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেন।’
ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা ডা. দেবী শেঠির পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ একটি দল ওবায়দুল কাদেরকে নেওয়ার জন্য ঢাকায় অবস্থান করায় ওই হাসপাতালের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই তাঁকে সেদেশে পাঠানো হয়।’
বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার, কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সৈয়দ আলী আহসান ও আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানাসহ মেডিকেল টিমের অন্য সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এই সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্যের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ডা. সৈয়দ আলী আহসান বলেন, তাঁর রক্তের পিএইচ মোটামুটি স্বাভাবিক, ব্লাড সুগার আগে ২৬ ছিল, এখন তা কমে এসেছে। তিনি বলেন, এখন তিনি (কাদের) নড়াচড়া করছেন, তবে তাঁর শ্বাস- প্রশ্বাস ভেন্টিলেটরের সাহায্যে চলছে।
ডা. আহসান বলেন, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা স্টেবল রয়েছে, উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তবে হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:এনটিভি অনলাইন