বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা : বিভিন্ন নৌযান শ্রমিকদের বেতনসহ ১৫ দফা দাবিতে লাগাতার ধর্মঘটের বিষয়ে সরকার, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা বৈঠক শেষেও কোন সমঝোতা হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ১০ মে’র মধ্যে একটি কমিটি গঠন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
সরকারের এই প্রস্তাবে মালিক পক্ষ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। অপরদিকে সরকারের এ প্রস্তাব নৌযান শ্রমিকদের দাবি পূরণে কার্যকর হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে বলে নৌযান শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন। তবে ঢাকা-নারায়নগঞ্চ-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে মালিক পক্ষ।
শনিবার রাজধানীর শ্রম ভবনে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ডাকে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আজ বিকেল পৌনে ৫টায় শ্রম ভবনে তৃতীয় পক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে এ বৈঠক শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে দু’পক্ষের মধ্যে এ বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন শ্রমবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিক। শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো নিয়ে আমরা বৈঠকে বসেছি। তাদের দাবি দাওয়ার যৌক্তিকতা আছে। আগামী ১০ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার জন্য শ্রমিক নেতাদের বলেছি। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানিয়েছে।’
বৈঠকে শ্রমবিষয়ক সচিব মিকাইল শিপার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার (লঞ্চ মালিক সমিতি) প্রধান উপদেষ্টা মো. গোলাম কিবরিয়া টিপু, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যা:পা) সংস্থার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বাদল, বাংলাদেশ ওয়েল ট্যাংকার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাবিবুল আলম, কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লক্ষণ চন্দ্র ধর, খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মো. সাউফুল ইসালামসহ নৌযান মালিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নৌ-শ্রমিকদের লাগাতার এ ধর্মঘটের কারণে শনিবারও সারাদেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ, মালবাহী কার্গো, কোস্টার, ট্যাকাংরসহ অন্যান্য ইঞ্জিনচালিত নৌ চলাচল বন্ধ ছিল। এছাড়া নৌ এবং দুই সমুদ্রবন্দরেও বন্ধ ছিলো পণ্য খালাস ও পরিবহন।
অন্যদিকে নৌ-শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটে নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নৌ-পথের যাত্রীরা। পাশপাশি পণ্য খালাস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ৪টি দাবি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ইঞ্জিন অ্যান্ড বাল্কহেড বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু তাদের সহযোগী সংগঠন লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের সংগঠনও কর্মবিরতি চালিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সর্বনিম্ন মজুরি ১১ হাজার টাকা নির্ধারণ ও গ্রহণযোগ্য পে-স্কেল ঘোষণাসহ ১৫ দফা দাবিতে গত বুধবার (২০ এপ্রিল) রাত ১২টা থেকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে লাগাতার ধর্মঘট শুরু হয়। কর্মবিরতি আহ্বান করা সংগঠনগুলো হলো- নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন, জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন, লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন।
বাংলা৭১নিউজ/এএফ