বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: সকালের কথা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন রাতে? কিম্বা আপনার যাওয়ার কথা এক জায়গায়, যাচ্ছেন আরেক জায়গায়।চেনা পথ, অথচ নিজের বাসাটাই খুঁজে পাচ্ছেন না। এরম হওয়ার কারণ কী? ভেবে দেখুন। আপনার ব্রেন শুকিয়ে যাচ্ছে না তো! ধরুণ আপনাকে প্রশ্ন করা হলো:
১) কাল রাতে কী কী খেয়েছেন?
২) ৭২ থেকে ৭ বাদ দিলে কত হয় ?
৩) তিনটে নাম বলুন। তারপর ১৫ মিনিট বাদে আবার সেই নামগুলি মনে করে বলুন তো দেখি ? পারলেন?
গড়গড়িয়ে পেরে গেলে চিন্তার কিছু নেই। আটকালেই গড়বড়। ইঙ্গিত ব্রেন শুকিয়ে যাওয়ার। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে ব্রেন অ্যাট্রোফি। এই শুকিয়ে যাওয়ার মানে মস্তিষ্কের জল বা রক্ত শুকিয়ে যাওয়া নয়। গরমে ব্রেন শুকিয়ে যেতে পারে বলে ভাবলেও ভুল। এর অর্থ, ব্রেনে কোষের পরিমাণ কমতে থাকা। ৬০ বছর বয়সের পর থেকে একটু একটু করে নিউরোনের সংখ্যা কমতে থাকে। মস্তিষ্কের কোন অংশের কোষের সংখ্যা কমছে তার উপর নির্ভর করে সমস্যাগুলি কেমন হবে। মূলত ব্রেন শুকিয়ে যাওয়ার কারণেই পার্কিনসন, ডিমেনশিয়া, রোগীর ব্যবহারে আমূল কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। ব্রেন স্ট্রোক হওয়া রোগীর ব্রেন অ্যাট্রোফিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে স্ট্রোকের কয়েক বছর পরেই সমস্যাটি শুরু হয়।
ব্রেন শুকোচ্ছে বুঝবেন কীভাবে?
এই অসুখের লক্ষণ ভুলে যাওয়া, হাত-পা ঠিক মতো নাড়তে না পারা, হাঁটতে কষ্ট, খুব শান্ত মানুষ হঠাৎ রাগী হয়ে গেলেন। জামাকাপড় ঠিকমতো পরতে না চাওয়া, যত্রতত্র অস্বাভাবিক ব্যবহার করা। এই সব সমস্যা রোগীর নিজের পক্ষে বোঝা কঠিন। বাড়ির লোককেই ব্যবহারিক পরিবর্তনগুলি দেখে বুঝতে হবে। সিটি স্ক্যান ও ব্রেনের এমআরআই করে স্পষ্ট করা যায় ঠিক কতটা এবং কোন অংশ শুকিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত, লক্ষণ বুঝতে দেরি হওয়ার কারণে ব্রেন অ্যাট্রোফি অনেকটা জটিল পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তখন চিকিৎসার খুব একটা সুযোগ থাকে না।
৬০ বছরের পরেই শেখায় নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
যেহেতু বয়স্কদেরই এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয় তাই ৬০-এর পর থেকেই সাবধান। মাঝে মাঝেই নিজেকে কিংবা পরিবারের লোককে উপরের প্রশ্নগুলির মতো কিছু সাধারণ প্রশ্ন করে স্মৃতি পরখ করে নিতে হবে।
যে কোনও নতুন জিনিস শেখায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। এতে ব্রেনকে কাজে ব্যস্ত রাখা যায়। তাই নতুন ভাষা শেখা, মোবাইলের মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ায় নিত্য নতুন পরিবর্তন শিখে নেওয়া, নতুন রান্না শেখা, সেলাই শেখার মতো কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে হবে।
স্ট্রোক হওয়ার পর সুস্থ হয়ে গেলেও ব্রেন অ্যাট্রোফি যাতে না হয় তার জন্য প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া উচিত। নিয়মিত হাঁটাচলা, এক্সারসাইজ করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল রাখতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে। ডায়েটে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট কতটা থাকবে তা ডায়েটিশিয়ানের কাছ থেকে জেনে রাখা উচিত।
বাংলা৭১নিউজ/লেখক: ডা: সাদিয়া হোসেন