অ্যাম্বুলেন্সে স্ত্রীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঘোগা সেতুর পাশে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের বাস চাপায় নিহত হন সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেন ও অ্যাম্বুলেন্স চালক দ্বীন ইসলাম। তাদের পরিবারকে আপাতত ১০ লাখ টাকা দিতে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত বুধবারের মধ্যে ৫ লাখ ও ১৫ দিনের মধ্যে বাকি ৫ লাখ টাকা দিতে বলেছেন।
এ আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আর শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভংকর ঘোষ রাকেশকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
আদালতে ক্ষতিপূরণের রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। শ্যামলী পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ -বিআরটিএ-এর পক্ষে ছিলেন মুহাম্মদ রাফিউল ইসলাম।
আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘আয়নাল হোসেন ও অ্যাম্বুলেন্সচালক দ্বীন ইসলামের পরিবারকে আদালত প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা দিতে বলেছেন। আজকের দিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে। বাকি ৫ লাখ টাকা শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসকে দিতে হবে ১৫ দিনের মধ্যে। এই ১০ লাখ টাকা দিয়ে আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন অবকাশ ছুটির পর দাখিল করতে বলেছেন আদালত। ’
উল্লেখ্য, ঢাকার রূপনগরের সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেনের (৫৫) স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৪৫) ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত ২৫ এপ্রিল অ্যাম্বুলেন্সে স্ত্রীর লাশ নিয়ে আয়নাল হোসেন ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় বাড়িতে ফিরছিলেন।
পথে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা সেতুর পাশে অ্যাম্বুলেন্সটিকে চাপা দেয় শামলী পরিবহনের একটি বাস। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আয়নাল। পরে অ্যাম্বুলেন্সেরচালকও মারা যান। আয়নাল গাইবান্ধা সদরের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে। আর নিহত অ্যাম্বুলেন্সচালক দ্বীন ইসলামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানায়। এ দুর্ঘটনায় নিহত আয়নাল হোসেনের তিন ছেলে গুরুতর আহত হন।
পরে অ্যাম্বুলেন্সচালক দ্বীন ইসলামের স্ত্রী, সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেনের মেয়ে, আয়নালের আহত তিন ছেলে, অ্যাম্বুলেন্সচালকের আহত সহকারী ও অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক গত ৩১ জুলাই ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে নিহত অ্যাম্বুলেন্সচালক দ্বীন ইসলামের স্ত্রী ডলি পারভীনকে ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, নিহত সবজি বিক্রেতা আয়নালের মেয়ে রোজিনা খাতুনকে ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আয়নালের আহত তিন ছেলে ফরহাদ হোসেনকে ৮ লাখ টাকা, ফিরোজ হোসেনকে ৪ লাখ টাকা ও ফরিদ হোসেনকে ৮ লাখ টাকা, অ্যাম্বুলেন্সচালকের সহকারী দুলফিজুর রহমানকে ৯ লাখ টাকা এবং দুমড়েমুচড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আবদুল আলী বাশারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর গত ৭ আগস্ট রুলসহ আদেশ দেন আদালত।
এ দুর্ঘটনায় দুর্ঘটনায় নিহত দুজনের পরিবার, আহত চারজন এবং দুমড়েমুচড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চিাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে এ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ প্রদান সংক্রান্ত ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩ ধারা অনুসারে ‘আর্থিক সহায়তা তহবিল’ গঠনের অগ্রগতি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে (বিআরটিএ চেয়ারম্যান) জানাতে বলা হয়।
এ আদেশের পর হাইকোর্ট জারিকারকের মাধ্যমে রুলের নোটিস পাঠান। কিন্তু নোটিস গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় গত ২৩ নভেম্বর শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেন আদালত। আদেশ অনুযায়ী গত ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে হাজির হন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ। সেদিন আদালত তাকে ভর্ৎসনা করে হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে আইনজীবীর মাধ্যমে সমঝোতা করতে বলেন। কিন্তু সে সমঝোতা না হওয়ায় আপাতত ১০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিলেন উচ্চ আদালত।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ