উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়েই নির্ধারণ হবে নতুন নেতৃত্ব। এবারও ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিই থাকছে। এতে বেশকিছু নতুন মুখ থাকতে পারে। তবে দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা নেই।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে বলছে, সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প এখনও তৈরি হয়নি। অপরদিকে নানা দিক বিবেচনায় এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের অনেকটাই নিশ্চিত। তবে এই তালিকায় আরও রয়েছেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও ড. হাছান মাহমুদ।
তবে এবার আওয়ামী লীগে প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সদস্য পদে চমক আসতে পারে বলে জানা গেছে। দলটির নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের পরেই দেশের মানুষের আবেগ ও অনুভূতির জায়গায় আছে জাতীয় চার নেতার পরিবার। এই আবেগ ও অনুভূতি বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্য জায়গা পেতে পারেন এবারের কমিটিতে। ত্যাগী নেতাদের পাশাপাশি কমিটিতে থাকতে পারেন তৃণমূলের অনেক মুখও।
সূত্র বলছে, প্রেসিডিয়াম থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকে এবার উপদেষ্টা পরিষদে আনা হতে পারে। সেই শূন্য জায়গায় বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে অন্তত দুজনকে প্রেসিডিয়ামে নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে দলের যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আনার পরিকল্পনা চলছে। ইতোমধ্যে এই তালিকার দুজন নেতাকে দলীয় হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য এ বিষয়ে এই চার নেতার কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
অপরদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান কমিটি থেকে বেশ কয়েকজনকে বাদ দেওয়া চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বাদ পড়া নেতাদের পরবর্তীতে বিভিন্ন নির্বাচন বা কমিটিতে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। আর তাদের স্থলে সাবেক ছাত্রনেতা, দুঃসময়ে অবদান রাখা কজন তৃণমূল নেতা এবং সংখ্যালঘু কোটায় অনেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার তালিকায় রয়েছেন- বলরাদ পোদ্দার, খলিলুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা এইচএম মাসুদ দুলাল, মনিরুজ্জামান মনির, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি যথাক্রমে শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহম্মেদ মন্নাফী।
অন্যদিকে জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্য হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটন ইতোমধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ পেয়েছেন। তাকে পুনরায় সেখানে রাখা হতে পারে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমিকে এবারও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে রাখা হতে পারে।
এ ছাড়া মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী পরিবারের কেউ দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই। এই পরিবার থেকে প্রয়াত ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরনি সেলিম রিপন অথবা তানভীর শাকিল জয়কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ে। এবার ওই পরিবার থেকে ডা. জাকিয়া নূর লিপিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠের বিরোধী দল ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ফলে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্ধারণ করতে হবে। বিগত দিনে বঙ্গবন্ধুকন্যার নির্দেশে যারা সংকট মোকাবিলায় উত্তীর্ণ হয়েছেন কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তারা অগ্রাধিকার পাবে- এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা অপরিহার্য। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নবীন ও তরুণদের এবং নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দেবে। যাতে আগামীতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন তৈরি হয়। অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড, নীতি-নৈতিকতা, সততা ও সাহস দেখে যোগ্য লোকদের নেতৃত্বে আনা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ