বাংলাদেশে প্রতি বছরই শীতকালীন ছুটির সময় একসাথে বেড়াতে যাওয়া অনেকটা পারিবারিক নিয়ম বললেই চলে। তাই, শীত শুরু হতে না হতেই বাসায় শুরু হয়ে যায় ছুটি পরিকল্পনার এক উৎসবমুখর আমেজ। বেড়াতে বা ঘুরতে যে অনেক দূরে বা বড় বাজেটে হতে হবে তেমনটা নয়। হতে পারে তা নানাবাড়ি বা দাদাবাড়িও। মোটকথা শীতে কোথাও ঘুরতে না গেলেই নয়!
শীতে প্রকৃতিও ধারণ করে এক অনন্য রূপ। শীতকালে গ্রীষ্মের ঘাম ঘাম ভাব ও ক্লান্তি উপেক্ষা করে কুয়াশার চাদর আমাদের সফরকে করে তুলে আরও উপভোগ্য। তাই আপনার ও আপনার প্রিয়জনদের এবারের ভ্রমণ পরিকল্পনা আরও সহজ করে তুলতে দেখে নিই বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের কয়েকটি জায়গা।
লালাখাল
সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত এই নদীটি শীতের সময় হয়ে উঠে অপূর্ব সুন্দর এক নীলাভ জলরাশি। পানি এতটাই স্বচ্ছ, যেন নদীর তলদেশ দেখা যায় একদম উপর থেকেই। শুধু তাই নয়, এই স্বচ্ছ পানির সাথে দেখা যায় চেরাপুঞ্জির ঘন সবুজ পাহাড়ের সমাহার। এই প্রশান্তিদায়ক দৃশ্য দেখতে দেখতে নৌকা ভ্রমণ, সাথে শীতের ঠাণ্ডা বাতাস ও মিষ্টি রোদ – আহা!
এমন ভ্রমণ অভিজ্ঞতার সাথে মুখরোচক খাবার কার না পছন্দ? আমরা সিলেটের সাত রঙের চা নিয়ে হয়ত শুনেছি, এর পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে খেতে পারবেন সাতকরা দেয়া মাংস অথবা মাছসহ আরও সিলেটি পদের সমাহার। তাছাড়া, মুঠোভর্তি চিনাবাদাম নিয়ে নৌকায় চড়ে প্রকৃতি উপভোগ করতে মন্দ লাগবেনা।
সীতাকুণ্ড
ইদানীং ভ্রমণপিপাসু বাঙালিদের পছন্দের শীর্ষে আছে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা। প্রকৃতি ও রোমাঞ্চের মিলনস্থল এই উপজেলাতে রয়েছে পাহাড়, ঝর্ণা, নদীসহ নানান দর্শনীয় স্থান, যার মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের নাম অনেকেই শুনেছেন। ক্যাম্পিং অথবা ট্রেকিং-এ যারা যেতে চান, তাদের জন্য সীতাকুণ্ডে রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে এই শহরে পৌঁছানো যায় সহজেই।
সেন্টমার্টিন
উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ, সাথে হাতে একটা ডাব – আর কি লাগে! একটা সুন্দর বিকেলের জন্য নারিকেল জিঞ্জিরায় এইটুকুই যথেষ্ট। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পুর্বে অবস্থিত এই প্রবাল দ্বীপে শুধুমাত্র সমুদ্রের প্রশান্তিই নয়, তৈরি করা যাবে বিভিন্ন অবিস্মরণীয় স্মৃতি। সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা খরচ করে স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং করে ঘুরে আসতে পারবেন সমুদ্রের তলদেশ থেকে।
এছাড়াও, সেন্টমার্টিনে আরও উপভোগ করা যাবে মজাদার “সি-ফুড”। এমন একটি দ্বীপে পুর্ণিমা রাতের চাঁদের আলোয় আপনি ও আপনার প্রিয়জনেরা উপভোগ করতে পারবেন অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত।
রাঙ্গামাটি
পাহাড়, জলপ্রপাত ও লেকের এক অদ্ভুত মিলনমেলা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম লেক কাপ্তাই লেক। শীতকালে নৌকায় চড়ে কাপ্তাই লেক ভ্রমণের সময় দেখা যাবে নীল দিগন্তের অপার্থিব সৌন্দর্য। এছাড়া, ঘুরে আসতে পারবেন শুভলং ঝর্ণা ও দেখতে পারবেন আরও অনেক ছোট ছোট জলপ্রপাত। কাপ্তাই লেক ঘুরতে ঘুরতে আপনার দুপুরের খাবার সেরে আসতে পারবেন পাহাড়ের উপর অবস্থিত কোন এক রেস্টুরেন্ট থেকে, খেতে পারবেন সুস্বাদু ব্যাম্বু চিকেন।
লেকে বেড়ানো শেষে আশেপাশে অবস্থিত কিছু হোটেল অথবা রিসোর্টে হয়ে যেতে পারে রাত্রিযাপন। লেকের পাশে স্নিগ্ধ সকাল উপভোগ করার এমন সুবর্ণ সুযোগ সহজে পাওয়া যায় না। সাথে রাঙ্গামাটিতে পাওয়া যাবে বিভিন্ন পাহাড়ি খাবারের সমাহার, যা জিভে জল আনার জন্য যথেষ্ট।
এই শীতে যেকোনো জায়গাতেই যাওয়ার সময় শীতের কাপড় নেয়ার কথা মাথায় রাখতে হবে। সাথে মশা নিরোধক ক্রিম, ঠাণ্ডা-কাশির ঔষধ এবং প্যারাসিটামল নিতে ভুলবেন না।
সব পরিকল্পনা হয়ে গেলে বাকি থাকে বাজেট। বাস অথবা প্লেনের টিকিট, হোটেল বুকিং, খাবার ও অন্যান্য খরচের উপর নির্ভর করে ট্রিপের বাজেট।
এক্ষেত্রে, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) থেকে মোট খরচের একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওটিএ শেয়ারট্রিপ তাদের অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দিচ্ছে সবচেয়ে কম খরচের নিশ্চয়তা। ফ্লাইট, হোটেল, হলিডে প্যাকেজ সহ সবকিছুর সহজ সমাধান।
বাংলাদেশে শীতকাল মানেই ভ্রমণ, কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে বিস্তারিত প্ল্যান করা কিছুটা কঠিন হয়ে ওঠে। এই কঠিন কাজকে সহজ করার জন্য এবং নিজের প্রিয়জনদের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি করে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে শেয়ারট্রিপের মতো ওটিএ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ