রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন-২০২৩) মুনাফা বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ। যা ব্যাংকটির ৫২ বছরের ইতিহাসে ষান্মাসিক হিসাবে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার (১ জুলাই) ছিল ব্যাংক হলিডে। ওইদিন ব্যাংকগুলো তাদের বিভিন্ন শাখা থেকে পাঠানো হিসাব একত্রিত করে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। রূপালী ব্যাংকও তাদের ষান্মাসিক হিসাব প্রস্তুত করেছে।
ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র নিশ্চিত করেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে বা অর্ধ-বার্ষিক হিসাব সমাপনীতে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৪০ কোটি টাকারও বেশি। গত বছর (২০২২ সালে) একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল মাত্র ৫৭ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে ছিল ২৮ কোটি টাকা। এছাড়া ১০ মাসে ব্যাংকটির ঋণ ও আমানতের পরিমাণও বেড়েছে।
পরিচালন মুনাফা নিয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রদান করা যাচ্ছে না।
ব্যাংকিং খাতে যখন আমানত সংকট তখন কীভাবে এত আমানত বাড়ল? এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা মনে করি যেহেতু এটি সরকারি ব্যাংক তাই এর প্রতি গ্রাহকদের যে আস্থা… এটা তারই প্রতিফলন। এই বিপুল পরিমাণ আমানত সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে ব্যাংকটি সব আর্থিক সূচকে আরও ভালো করবে বলে মনে করছেন তিনি।
ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মূলত সুদ ও ট্রেজারি থেকে আয় এবং আদায় বাড়ায় ব্যাংকটি অর্ধ-বার্ষিকীতে এই মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মূলত ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণে জোর দিয়েছে ব্যাংকটি। অর্থাৎ কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) ঋণ বাড়িয়েছে। এছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যে জোর দেওয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্স আহরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ব্যাংকটি। যার কারণে ব্যাংকের এই অর্জন।
শুধু ঋণ দেওয়া নয়, আদায়েও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত যেখানে মাত্র ৫৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল, চলতি বছর (২০২৩ সালে) সেখানে নগদ আদায় হয়েছে ৩২৮ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা মনে করেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঘোষিত ১০০ ও ১৫০ দিনের বিশেষ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে এ সাফল্য এসেছে।
জানা গেছে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব নেন। এরপর ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এসময় ঋণ বেড়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে যখন চারদিকে নানা নেতিবাচক খবর তখন রূপালী ব্যাংকের এই অর্জন ব্যাংকগুলোর প্রতি সাধারণ জনগণ ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলোও দ্রুত তালিকাভুক্ত করা উচিত। এতে করে তারাও জবাবদিহিতার আওতায় আসবে এবং রূপালী ব্যাংকের মতো ভালো করার তাগিদ অনুভব করবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রূপালী ব্যাংকের ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার মালিক সরকার। বাকি ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। সরকারি ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ৭০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৪৬৪ কোটি ৬৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রিজার্ভে আছে ৫৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস