বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামী আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজের রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর পর তাকে পড়ে শোনানো হয়েছে।
সোমবার রাত পৌনে নয়টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে থাকা নিজামীকে রায়টি পড়ে শোনানো হয়।
বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের কপি সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে পৌঁছান ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা। এর আগে বিকেল ৫টার দিকে আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছান।
লাল কাপড়ে মোড়ানো রায়ের কপি গ্রহণ করেন সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবিরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এখন যেকোনো সময় কারাগারের রজনীগন্ধা সেলে থাকা নিজামীকে সেটি পড়ে শোনানো হবে। একই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না তা জানতে চাওয়া হবে।
রাযের কপি পাওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনিয়র জেলা সুপার জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বলেন, এখন ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নেবে কারা কর্তৃপক্ষ। জেল কোডের নিয়ম মেনে আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বেঞ্চের অপর তিন সদস্য বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী স্বাক্ষরের পর রিভিউ খারিজের রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত ২২ পৃষ্ঠার রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
আইননুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে। এরপর সরকারের সিন্ধান্ত অনুযায়ী নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে তার আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন নিজামী।
এর আগে গত ৫ মে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ নিজামীর রিভিউয়ের আবেদন খারিজ করে ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে আদেশ দেন। গত ৩ মে রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৫ মে দিন নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ।
গত ২৯ মার্চ ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন নিজামী। ৭০ পৃষ্ঠায় রিভিউ আবেদনে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি যুক্তি দেখানো হয়।
গত ১৫ মার্চ নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আপিল বিভাগের চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর এ রায় প্রকাশ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রেখে রায় দেন।
২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
৭২ বছর বয়সী মাওলানা নিজামী হলেন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা তৃতীয় ব্যক্তি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যিনি এখন সর্বোচ্চ দণ্ডের মুখোমুখি।
পাবনা-১ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত মাওলানা নিজামী ২০০১ সালে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। প্রথমে দুই বছর কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে সরকারের পরের তিন বছর তিনি ছিলেন শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে।
আর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।
তাদের দুজনের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি।
এরপর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় গতবছরের ২১ নভেম্বর। তারাও প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এর বাইরে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামিদের মধ্যে কেবল জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় এসেছে আপিল বিভাগে। ট্রাইব্যুনালে তাকে দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার রায় কমিয়ে আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছে, তার রিভিউ চেয়েছে দুই পক্ষই।
বাংলা৭১নিউজ/আর