বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মেসার্স কুলিয়ারচর সি-ফুডস লিমিটেড ২০১৬ সালের ১২ জুলাই চিংড়ি মাছ রফতানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ৭২০ মার্কিন ডলার মূল্যের সেই চিংড়ি ইকোপ্যাক ইনস.কিউবেক.কানাডা নামে একটি প্রতিষ্ঠান কিনেছিল। ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে একই বছরের ২১ এবং ২৭ জুলাই শিপমেন্ট সম্পন্ন হয়েছিল।
এরপর ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর দুই লাখ ৩৪ হাজার ডলার মূল্যের এক হাজার ৬০০ কার্টন চিংড়ি রফতানি করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের রফতানির এক হাজার কার্টন চিংড়ি প্রত্যাখ্যান করে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সেই চালানের ৬০০ কার্টন চিংড়ির মূল্য ছিল এক লাখ সাত হাজার ২০০ ডলার। সে বাবদ দেশে আসে ৬২ হাজার ৯৯৩ মার্কিন ডলার। প্রায় অর্ধেক পরিমাণ (৪৪ হাজার ২০৬ ডলার) অর্থ এখনও আসেনি।
এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কেন্টাইল ব্যাংককে চাপ দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ব্যাংকটি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে আগের দায় সমন্বয়ের চেষ্টা করে। যেটি রফতানি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এদিকে চলতি বছরের ১৭ জুন সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০২০’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সাল শেষে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। পাচার হওয়া অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হয়। একইভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও সেসব ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত বিশেষ পরিদর্শনে আরও উঠে আসে, একই ঘটনায় মার্কেন্টাইল ব্যাংককে এর আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। গ্রাহকের নামে বরাদ্দ রফতানি সহায়তার ১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ২০১৭ সালে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছিল তাদের। কিন্তু সে অর্থ সরকারি কোষাগারে যায়নি। উল্টো সেই একই গ্রাহককে আবারও ২৬ কোটি টাকার বেশি রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
নগদ সহায়তা নীতিমালা বলছে, রফতানি মূল্য বাকি থাকলে পরবর্তী দুই বছর কোনো প্রতিষ্ঠানকে আর নগদ সহায়তা দেয়া যাবে না। কিন্তু নির্দেশনা উপেক্ষা করেই কুলিয়ারচর সি-ফুডস লিমিটেডকে ফের নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত পরিদর্শনে এ তথ্য উঠে আসে।
কুলিয়ারচর সি-ফুডসের অর্থপাচার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামরুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের মুখপাত্র (এএমডি) আছেন তিনি ভালো বলতে পারবেন।’
ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মতিউল হাসান বলেন, ‘তারা আমেরিকায় রফতানি করেছিল। মালামাল চলে গেলেও তাদের টাকা আসেনি। তারা আমেরিকার অন্য একটি কোম্পানির কাছে সেটি রফতানি করে, তারা টাকা দেয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে তারা আমেরিকার কোর্টে একটা মামলা করেছিলেন, সেটি তদন্তাধীন। আমাদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে চেয়েছিল, এ টাকা কেন আসেনি, আমরা জানিয়েছি এটা সাবজুডিস। কোর্টের ডিসিশন হলে আমরা পদক্ষেপ নেব। তারা হিয়ারিংয়ের জন্য আমেরিকায় তারিখ নিয়েছে, সেখানের আইনজীবীর সঙ্গেও কথা হয়েছে।’
নগদ প্রণোদনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়ম হলো যদি কোনো প্রসিডিউর না আসে তাকে প্রণোদনা দেয়া যায়। তারা কোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিয়েছে। অনুমতি ছাড়া পরবর্তীতে রফতানি করতে পারবে না, কোর্টের অনুমতি থাকলে পারবে। এখানে পার্টির (গ্রাহক) কোনো দোষ নেই, তাকে প্রণোদনা না দিলে তার সব ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।’
বাংলা৭১নিউজ/এএফ