বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: রজব মাস চলছে। মুসলমানদের কাছে রজব মাস আসে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে। প্রতিটি বড় বড় কাজ ও মহান দায়িত্ব পালনের জন্য নানা আয়োজন, প্রশিক্ষণ ও পূর্বপ্রস্তুতির দরকার হয়। রমজানে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ইসলামের অন্যতম ইবাদত। এর মাধ্যমে পাপপঙ্কিলতাপূর্ণ অন্তরকে পরিশোধিত করা হয়। স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সেতুবন্ধন স্থাপিত হয়। তাকওয়ার জ্যোতিতে ইমানের দ্যুতিতে মানবাত্মাকে সাজিয়ে তোলা হয়।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো’- (সূরা বাকারা : ১৩৮)। পবিত্র সিয়াম সাধনার বিশেষ গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে দুই মাস আগে রজব থেকেই এর মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাসের আগমন হতো, তখন মহানবী (সা.) এই দোয়াটি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান’- অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন’- (মুসনাদে আহমদ-১/৩৩১, মেশকাত-১২১)।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রজব মাস হচ্ছে মহান আল্লাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি মাস, ফজিলতের দিক থেকে রমজানের পর অন্য কোনো মাস এর সমপর্যায়ের নয়। এ মাসে কাফেরদের সঙ্গেও যুদ্ধ করা হারাম। রজব মাস আল্লাহর মাস, শাবান মাস আমার মাস এবং রমজান মাস হচ্ছে আমার উম্মতের মাস। যে ব্যক্তি রজব মাসের একটি দিন রোজা রাখে, মহান আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হন, তার প্রতি মহান আল্লাহর ক্রোধ দূর হয়ে যায় এবং জাহান্নামের একটি দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়।’
অন্য হাদিসে আছে, ‘রজব মাস হচ্ছে আমার উম্মতের ক্ষমা প্রার্থনার মাস। অতএব এ মাসে অত্যধিক ক্ষমা প্রার্থনা কর, কেননা মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।’ ‘রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। জাহেলি যুগে আরবরা এ মাসকে খুবই সম্মানের চোখে দেখত। এ মাসের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষায় তারা নিত্য চলমান হানাহানি, মারামারি ও যুদ্ধ বন্ধ করে দিত। এ জন্যই তারা এ মাসকে রজব নামে অভিহিত করেছিল। ইসলাম এসেও এ মাসের মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২টি, যা আলাহর কিতাব (বিধান) অনুযায়ী সেই দিন থেকেই চালু আছে, যেদিন আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন।
এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ’- (সূরা তাওবা : ৩৬)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘১২ মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সর্বাধিক সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম আর চতুর্থটি হলো রজব, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মাঝখানে অবস্থিত’- (বোখারি শরিফ : ২/৬৭২)। এ মাসগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এসব মাসে কোনো নেকআমল করলে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়।’ তবে স্মরণ রাখতে হবে যে শরিয়তের পক্ষ থেকে এ মাসের জন্য বিশেষ কোনো নামাজ ও ইবাদতের পদ্ধতি বাতলে দেয়া হয়নি। তাই ইবাদতের জন্য মনগড়া ও ভিত্তিহীন কোনো পন্থা অবলম্বন করা যাবে না।
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। তাই এ মাস থেকেই তাওবা-ইস্তেগফার করে আল্লাহর দিকে আরো বেশি মনোনিবেশ করতে হবে। গোনাহের গন্ধে কলুষিত অন্তরাত্মাকে তাওবার মাধ্যমে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
হজরত আবু বকর বলখি (রহ). বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস। শাবান ফসলে পানি সেচ দেয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস। তিনি আরো বলেন, ‘রজব মাস ঠা-া বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো আর রমজান মাস হলো বৃষ্টির মতো’- (লাতায়েফুল মা’আরেফ-১৪৩)। রজব মাস থেকেই নবীজী (সা.) রমজানের প্রস্তুতিস্বরূপ রোজা রাখা শুরু করতেন। মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রজব মাসের রাতগুলোর একটিতে (দুই রাকাত করে) নির্দিষ্ট একটি নিয়মে ১০ রাকাত নামাজ আদায় করবে, মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।
নামাজ আদায়ের পদ্ধতিটি হলো প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পর একবার সূরা কাফিরুন এবং তিনবার সূরা এখলাস যুক্ত করে পড়া’। এছাড়া বিভিন্ন হাদিসে রজব মাসের ফজিলত ও আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করার মাস হিসেবে রজব মাস মুসলমানদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এ জন্য সবার উচিত প্রিয় নবীজীর (সা.) আদর্শ অনুসরণ করে এই মাসটিকে যথার্থভাবে আমলে কাটানোর চেষ্টা করা।
রাসূলের (সা.) মতো রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণস্বরূপ রোজা রাখার আমল করা। রজবের প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে রমজানের প্রস্তুতি। যারা রজব মাস থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবেন তারাই রমজান কাটাতে পারবেন পুরোপুরি হক আদায় করে।
এছাড়া রজব মাসের মহামান্বিত রাত লাইলাতুল মেরাজে ইবাদত-বন্দেগি করে কাটানোও মুমিনের দায়িত্ব। অতএব রজব মাস থেকেই শুরু করতে হবে রমজানের সার্বিক প্রস্তুতি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে