বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: সরকারকে কড়া ভাষায় সতর্ক করলেন শ্রীলঙ্কায় বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেছেন, রক্তপাত এড়ানোর সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই এরই মধ্যে সাংবিধানিক যে সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে কয়েকদিনের মধ্যে তার সমাধান করবে পার্লামেন্ট।
বরখাস্ত হওয়ার পর তিনি গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত সরকারি বাসভবনের ভিতরে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে বের হন নি বিক্রমাসিংহে। অন্যদিকে ওই বাসভবনের বাইরে অবস্থান করছেন তার হাজার হাজার সমর্থক, নেতাকর্মী। সেখান থেকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে রক্তপাত এড়ানোর ওই সতর্কতা দেন। রণিল বিক্রমাসিংহে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন, ‘বেপরোয়া হয়ে উঠেছে লোকজন’।
তারা ভারতীয় মহাসাগরের বুকে এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্য দিয়ে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন দেশে এক রক্তপাতের সূচনা হতে পারে।
গত ২৬ শে অক্টোবর থেকে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ এক সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ওইদিন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা তার ৬৯ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন। সঙ্গে সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়িয়ে নেন। তবে বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট বেআইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তাই তিনি এখনও দেশটির প্রধানমন্ত্রী। তাকে সমর্থন করেন পার্লামেন্টের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া। এর ফলে প্রশাসন স্পষ্ট দ্বি-বিভক্ত হয়ে পড়েছে। রাজাপাকসে নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানায় চীন। কারণ, তিনি চীনপন্থি। অন্যদিকে বরখাস্তকৃত রণিল বিক্রমাসিংহে ভারতপন্থি। এ কারণে শ্রীলঙ্কার এই রাজনীতি আঞ্চলিকতায়ও প্রভাব ফেলেছে।
রণিল বিক্রমাসিংহে তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে সরকারি বাসভবনের ভিতরেই অবস্থান করছেন। ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত ‘টেম্পল ট্রিস’ বাসভবনে তিনি নিজেকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। আর তার বাইরে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছেন। রণিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টও স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। এর উদ্দেশ্য বিরোধী দল যাতে তাদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখানোর কোন সুযোগ না পায়।
আর এর ফলে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়। গত সপ্তাহে ক্ষমতার লড়াইয়ে গোলাগুলি হয় তেলমন্ত্রী ও সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গার অফিসের বাইরে। তাতে কমপক্ষে একজন নিহত হন। রানাতুঙ্গা এ সময় তার সরকারি অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। পরে তাকে মাথায় হেলমেট পরিয়ে, সেনাবাহিনীর পোশাক পরিয়ে বের করে নেয়া হয়।
এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার দিনের শেষের দিকে রণিল বিক্রমাসিংহে বলেন, সংহিসতা পরিহার করার জন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কি ঘটতে পারে তা কেউ জানে না। তিনি সাফ জানিয়ে দেন অল্প কয়েজন বেপরোয় মানুষের কারণে শুরু হতে পারে রক্তপাত। তার এ হুঁশিয়ারি যেন পার্লামেন্ট স্পিকার কারু জয়সুরিয়ার সতর্কতারই প্রতিধ্বনি। স্পিকার সতর্ক করে বলেছেন, দুই নেতার বিষয়ে যদি এমপিদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে ভোটে নেয়া না হয় তাহলে শ্রীলঙ্কার পথে পথে রক্তপাত ছড়িয়ে পড়বে।
ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) প্রধান রণিল বিক্রমাসিংহে। এ দলটি এখনও পার্লামেন্টে সর্ববৃহৎ। সঙ্কট সমাধানের জন্য এ দলের পক্ষ থেকে পার্লামেন্টে ভোটের আহ্বান জানানো হয়েছে। আর পাশাপাশি মিত্রদেরকে তাদের পাশে ভেড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পার্লামেন্ট স্থগিত করার কারণে নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে হাতে সময় পেয়েছেন। এ সময়ে তিনি পার্লামেন্টে নিজের জয় নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এমনিতেই তিনি শ্রীলঙ্কায় তামিলদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ শেষ করার কারণে এখনও বেশ জনপ্রিয়।
রণিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, তিনি আশা করেন পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হবে। তিনি আশা করেন, এই সঙ্কট দ্রুততম সময়ে সমাধান হবে। তার ভাষায়, আমি আশা করি পার্লামেন্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তবে তাতে দীর্ঘ সময় নেয়া যাবে না। আমার মতে এই সময় এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের বেশি হতে পারবে না। তিনি দাবি করেন, দুটি ক্ষুদ্র দল মার্কসিস্ট জনতা বিমুক্তি পেরামুনা এবং তামিল ন্যাশনাল এলায়েন্স তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তারা তার সঙ্গে রয়েছে।
এ দুটি দল শুক্রবার একটি আবেদনে স্বাক্ষর করেছে। ওই আবেদন পাঠানো হয়েছে পার্লামেন্ট স্পিকারের কাছে। তাতে আগামী ৭ই নভেম্বর ২২৫ আসনের পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। রণিল বিক্রমাসিংহে বলেন, পার্লামেন্টের বেশির ভাগ সদস্যই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যে কাজ করেছেন তা বেআইনি এবং সংবিধান সম্মত নয়।
শেষ হিসাব পর্যন্ত রণিল বিক্রমাসিংহকে সমর্থন করছেন ১০৩ জন এমপি। অন্যদিকে মাহিন্দ রাজাপাকসে ও প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাকে মোট ১০০ এমপি সমর্থন করছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাকি ২২ জন এমপির বেশির ভাগই সমর্থন করতে পারেন রণিল বিক্রমাসিংহেকে।
বাংলা৭১নিউজ/বিকে