একের পর এক যৌন হয়রানি ও ধর্ষনের অভিযোগে অপরাধীর তালিকায় নাম লেখানো মার্কিন প্রযোজক ও হলিউডের প্রাক্তন নির্মাতা হার্ভে ওয়েইনস্টেইন আরেকটি ধর্ষন মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিচারকরা একজন নারীকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এই সাবেক প্রযোজককে।
দুই মাসের বিচারে শোনা হয়েছে যে কিভাবে ওয়েইনস্টেইন নারীদের যৌন আক্রমণ করার আগে ব্যক্তিগত বৈঠকে প্রলুব্ধ করেছেন এবং নিজের প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক নারীকে যৌন হেনস্তা করেছেন। বিচারের রায়ে ৭০ বছর বয়সী অস্কার বিজয়ী প্রযোজককে ২৪ বছরের কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে বলে জানা গেছে।
দুই বছর আগে নিউইয়র্কে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার প্রথম বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি ইতিমধ্যেই ২৩ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন। নিউ ইয়র্কের একটি আদালত তাকে এসব অপরাধে অভিযুক্ত করে।
ওয়েইনস্টেইনকে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) ধর্ষণ এবং দুটি যৌন নিপীড়নের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল যার মধ্যে ‘জেন ডো ১’(ছদ্মনাম) নামে পরিচিত একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের স্ত্রী জেনিফার সিবেল নিউজম এবং ‘জেন ডো ২’ নামের অপর একজন নারীর অভিযোগের বিষয়ে রায়ে পৌঁছাতে পারেনি আদালত। এদিকে ‘জেন ডো ৩’ নামের একজনের অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন হার্ভে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের স্ত্রী জেনিফার সিবেল নিউজমকে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে হার্ভের বিরুদ্ধে
‘শেক্সপিয়ার ইন লাভ’ এবং ‘পাল্প ফিকশন’ প্রযোজক এবং বিনোদন সংস্থা মিরাম্যাক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হার্ভে ওয়েইনস্টেইন একটি ধূসর রঙের স্যুট পরে হাজির হয়েছিলেন আদালতে। তবে আগের মতো হুইলচেয়ার ব্যবহার করেননি তিনি।
হার্ভে ওয়েইনস্টাইন হলিউডের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষগুলোর একজন। ১৯৭৯ সালে ভাই ববকে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন স্বাধীন চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মিরাম্যাক্স। ২০০৫ সালে তারা এটি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠা করেন দ্য ওয়েইনস্টাইন কোম্পানি। তার প্রযোজিত অস্কারজয়ী সিনেমার তালিকায় আছে ‘শেক্সপিয়র ইন লাভ’, ‘শিকাগো’, “দ্য কিং’স স্পিচ”, ‘দ্য আর্টিস্ট’ এর মতো সিনেমা। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের মূল অর্থদাতাদের একজন ছিলেন তিনি।
হার্ভে ওয়েইনস্টেইন
২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে একজন অভিনেত্রী ও মডেলকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে শুধু তারকারাই নন, সহকারী আর অফিসের কর্মচারীরাও তার কুনজর থেকে রেহাই পাননি! ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগ আন্দোলনের সময় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নিপীড়নের অভিযোগ আনেন বহু নারী।
অস্কারজয়ী অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, কেট উইন্সলেট ও জেনিফার লরেন্সকেও যৌন হয়রানি করেন তিনি। পরে তার বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ আনা হয়। এরপর থেকেই বিচারের আওতায় আনা হয় সাবেক এই প্রযোজককে। ২০০৬ সালে প্রোডাকশন সহকারি মিরিয়াম হ্যালিকে যৌন নিপীড়ন ও ২০১৩ সালে অভিনেত্রী জেসিকা ম্যানকে ধর্ষণের অভিযোগে এর আগেও কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।
সূত্র : বিবিসি নিউজ
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ