যমুনা নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জ অংশে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় নতুন নতুন চর জেগে ওঠায় যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এক কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছাতে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। সময় ও জ্বালানি খরচ বেশি হওয়ায় মাঝিরা নৌকা বন্ধ রেখেছেন। ফলে চরাঞ্চলের মানুষকে পায়ে হেঁটে চর পাড়ি দিয়ে নৌকায় উঠে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, জেলা সদরের কাওয়াকোলা চরের কাটেংগা, বড় কয়ড়া, দোরতা, ছোট পিয়ার, কৈগারী দোরতা; চৌহালি উপজেলার ওমরপুর, ঘোরজান, সাদিয়াচাঁদপুর; শাহজাদপুর উপজেলার বাঙ্গালারচর, সোনাতুনী, হাতকোড়া, চরবেনটিয়া, চরতারটিয়ার চরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হাটবাজারে মালামাল ক্রয়-বিক্রয়, চিকিৎসা সেবা, অফিস আদালতে ও স্কুল-কলেজে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের যমুনা নদী পাড় হয়। ডুবোচরে এক ঘণ্টার নদীপথ পাড়ি দিতে ২-৩ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ডুবোচরের কারণে প্রতিদিন যমুনা নদী পার হয়ে আসা মানুষকে অনেক সময় নষ্ট করতে হয়।
কাওয়াকোলার কাটেংগা চরের মাসুদ রানা বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে এপারে আসতে আমাদের কোনো অসুবিধা হয়না বরং সামান্য প্রয়োজনেও আমরা উপজেলা সদরসহ এপারের হাট-বাজার অফিস আদালতে আসি। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নদী পার হতে অনেক জলপথ ঘুরে আসতে হয়। সঠিক সময়ে নিদিষ্ট জায়গায় পৌঁছানো কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে।’
চৌহালী স্বাস্থ্য ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা ঘোরজান চরের মতি মিয়া বলেন, ‘ক্লিনিকে যাওয়া অনেক কষ্ট সাধ্য ব্যাপার হয়েছে। নদীতে পানি কম থাকায় যমুনায় অনেক জায়গায় চর জেগে উঠেছে। এক ঘণ্টার পথ তিন ঘণ্টায় যেতে হচ্ছে।’
শাহজাদপুরের সোনাতুনী চরের সবজি বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, ‘নদীতে পানি কমে যাওয়ায় চর থেকে পায়ে হেঁটে নৌকায় উঠতে হয়। নদীতে ছোট-বড় চর জেগে উঠেছে তাই নৌকা নিয়ে আসতে অনেক সময় লাগে।’
ওমরপুর চরের শিক্ষক আফসার আলী বলেন, ‘যমুনা নদীতে এখন পানি কমে যাওয়ায় নতুন নতুন চর উঠার কারণে চৌহালী থেকে এনায়েতপুর নৌকা ঘাট হয়ে জেলা সদরে যাতায়াতে শ্যালো নৌকায় প্রায় তিন ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। পানি কমের কারণে এক চর থেকে আরেক চরে এখন পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে।’
চৌহালী উপজেলার নৌকা ঘাটের ইজারাদার নায়েব আলী জানান, ‘পানি কমায় নৌকা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন ড্রেজিং করে নৌ পথ তৈরি করা না হলে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।’
চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. তাজ উদ্দিন জানান, ‘ড্রেজিং করে নৌপথ বের না করলে জেলা সদরের সঙ্গে সব ধরনের কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়বে।’
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘যমুনায় নতুন নতুন চর জেগে ওঠায় পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। সমাধানে যমুনা নদীতে ড্রেজিং দ্রুত শুরু হবে।’
বাংলা৭১নিউজ/বিএফ