বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে গেল সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর আগে টানা দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বাড়ে। সে হিসেবে দুই সপ্তাহে যে পরিমাণ বাজার মূলধন বেড়েছিল, এক সপ্তাহেই তার থেকে বেশি কমলো। মূলধন কমার পাশপাশি সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৪ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। এর আগে টানা দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে নয় হাজার ৫২০ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। অর্থাৎ বাজার মূলধন বাড়লে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। একইভাবে বাজার মূলধন কমলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমে যায়।
বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গেল সপ্তাহে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৩টির। আর ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৩৯ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বা তিন দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৯৫ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৩৭ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৮৯ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা এক দশমিক ২৯ শতাংশ।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গেল সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৩৭ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে দুই দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১৫ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা এক দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা দুই সপ্তাহ বাড়ার পর গেল সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৯২ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা তিন দশমিক ৪২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৩ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৭৬ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বা তিন দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২৬১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় এক হাজার ৩৯৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৩৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা বা নয় দশমিক ৮২ শতাংশ।
সবশেষ সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ছয় হাজার ৩০৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ছয় হাজার ৯৯২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৬৮৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা নয় দশমিক ৮২ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫১৩ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের আট দশমিক ১৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়ান ব্যাংক শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫০০ কোটি ৫৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ৩০৪ কোটি ৮৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, এনআরবিসি ব্যাংক, ফরচুন সুজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জেনেক্স ইনফোসিস এবং প্রাইম ব্যাংক।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ