মিরিঞ্জা ভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এখানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি উপভোগ করা। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়।
মনে হয় মেঘের সাথে পাহাড়ের যেন আজন্ম বন্ধুত্ব। প্রকৃতি এই এলাকাটিকে সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। এখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ। আকাশকেও মনে হয় বেশ কাছে। রাতে শহরের আলো যেন সৌন্দর্যকে আরো বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
বান্দরবানের লামা উপজেলায় মিরিঞ্জা ভ্যালির অবস্থান। বান্দরবান শহর থেকে ৮৬ কিলোমিটার ও কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলা হতে ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লামা উপজেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া-লামা সড়কের পাশে এই মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান।
মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্র থেকে দেখা যায়, পাহাড় ও মেঘের মিতালী। এখানে পাহাড়িদের ঘরের আদলে তৈরি করা হয়েছে ২টি মাচাং ঘর। আরো একটি চলমান রয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য রয়েছে ছোট একটি দোকান। পাহাড়ের মেঘের মিতালী দেখতে পর্যটকদের আগমনের যেন শেষ নেই। পরিবেশ বান্ধব এই রিসোর্টে রাত্রীযাপন করতে দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেক পর্যটক। পর্যটন কেন্দ্রটির কাছেই রয়েছে উপজেলা শহর। সেখানে বসবাসরত ম্রো, মারমা, ত্রিপুরাসহ ১১টি ভাষাভাষীর জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি, সংস্কৃতি দেখার সুযোগও পাওয়া যায়।
মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রটি ২ একর পাহাড় জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। পাহাড়ে পরিবেশ বান্ধব ইকো রিসোর্ট হিসেবে তৈলি করা হয়েছে বাঁশের তৈরী মাচাং ঘর। এছাড়াও পর্যটকদের সুবিধার জন্য রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নীচে কয়েকটি তাবু ঘর। এদের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে রাতে চিকেন ফ্রাই, বিরিয়ানিসহ নানা পদের খাবারের। কেন্দ্রটির চারিপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ ভালো।
পর্যটন কেন্দ্রটি ২০২১ সালে গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়েছে ২০২২ সালে। তাছাড়া এই মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে উঠার ফলে কর্মসংস্থান হয়েছে বেশ কয়েকজনের, ভবিষ্যতেও আরো কর্মসংস্থান বাড়াবে বলে আশা করেন পর্যটন শিল্পে সংশ্লিষ্টরা।
নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঘুরতে আসেন পর্যটক সৈয়দুর, মো. আবির ও রুপালী। তারা বলেন, এই ভ্যালিতে না আসলে বুঝতে পারতেন না প্রকৃতি এত সুন্দর। ভোর হলে মেঘের কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পাহাড়ে মন হারিয়ে যায়।
মিরিঞ্জা ভ্যালির ভেনরিয়াল ম্রো জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে এই পাহাড়ের বিভিন্ন ফলজ ও বাগান ছিলো। তখন থেকেই পর্যটকদের আসা যাওয়া ছিলো অনেক। ভোর হলে বাগানে গেলে দেখা যেত মেঘের খেলা। সেখান থেকে পরিকল্পনা করে তৈরি করা হয় পর্যটন কেন্দ্র। নামকরণ করা হয় ‘মিরিঞ্জা ভ্যালি’। সম্পূর্ণ প্রকৃতি বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রটি। আগামিতে ‘মিরিঞ্জা ভ্যালি’ পর্যটকদের কাছে অন্যরকম হয়ে উঠবে বলে আশা করেন তিনি।
‘মিরিঞ্জা ভ্যালি’ পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জিয়া রহমান বলেন, ২০২১ সালে পাহাড়টিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখেছিলেন। ২০২২ সালে এসে সেটি বাস্তবায়ন করেন। বর্তমানে তার মিরিঞ্জা ভ্যালি’তে প্রতিদিন পর্যটকরা বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন। আবার অনেকেই মুঠোফোনে বুকিং দিচ্ছেন। মাসে তার আয় হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ