ভ্রমণ পিপাসুদের আগমনে আবারো জমে উঠেছে পানছড়ির দৃষ্টিনন্দন মায়াবিনী লেক। চারিদিকে পানি ঘেরা মাঝে কয়েকটি ছোট দ্বীপ এমনি অপরূপ দৃশ্য মায়াবিনী লেকের।
উপজেলার ৪নং লতিবান ইউপির কংচাইরী পাড়া গ্রামে এই লেকের অবস্থান। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা থেকে পানছড়ি সড়ক ধরে চৌদ্দ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভাইবোনছড়া বাজার হয়েই এর প্রবেশপথ। সর্বোচ্চ বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট সিএনজি, মাহেন্দ্র বা চান্দের গাড়ীতে চড়েই এখানে আসা যায়।
মায়াবিনীর সব কিছুই প্রকৃতির সৃষ্টি। স্বচ্ছ পানির এই লেকের পানিতে ভেসে বেড়ায় নানান জাতের দেশীয় মাছ। বাঁশবাগানের পাশাপাশি নানান জাতের আম্রকানন, সেগুন বাগান রয়েছে তার চারিপাশ জুড়ে। ঘুঘু, শালিক, হট টি টি, বকসহ নানান পাখির কলকাকলি আর উড়ে বেড়ানোর দৃশ্যটাও বেশ নান্দনিক।
দর্শনার্থীর বিনোদনের খোরাক দিতে রাখা হয়েছে কয়েকটি বানর। যার সামনে লেখা রয়েছে একশত হাত দুরে থাকুন। বিশ-ত্রিশ হাত পিছনে গেলেই লেকের পানিতে ডুবে সলিল সমাধি ঘটে যেতে পারে বলেই এক দর্শনার্থীর মুচকি হাসি।
তাছাড়া লেকের বুক চিরে নৌকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্পীড বোটে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর মজাটাই যেন আলাদা। করোনামহামারির কারণে কয়েকমাস ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন না ঘটলেও এরই মাঝে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসছে মায়াবিনী দর্শনে। সাথে প্রতিনিয়ত পিকনিক পার্টির আগমনও বেশ লক্ষনীয়।
কথা হয় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থেকে আসা একটি গ্রুপের আজিজ আহমেদ ও রেজোয়ানের সাথে। তারা জানায় ফেব্রুয়ারি মাসেই মায়াবিনীতে দ্বিতীয় বারের মতো আসা। বিশেষ করে শব্দবিহীন পরিবেশে নিরব বাতাসে নিজ হাতে বৈঠা বেয়ে নৌকা চড়ে ঘুরে বেড়ানোর মজাটাই আলাদা।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার অনার্স পড়ুয়া রনং চাকমা, মাটিরাঙা উপজেলার তাইন্দং বাজার টিলার কাদের ও আবির জানায়, বাঁশের তৈরী পুলের উপর দিয়ে এ দ্বীপ থেকে ও দ্বীপ যেতে ভালোই লাগে তাই ছুটে এসেছি উপভোগে।
ঢাকা যাত্রাবাড়ী থেকে আসা পর্যটক মাওলানা তাওহিদ জানায়, দীর্ঘ ভ্রমণে মনটা খুব খারাপ ছিল কিন্তু মায়াবিনীতে পর্দাপনের সাথে সাথেই যেন চিত্র পাল্টে যায়। মুক্ত হাওয়া, লেকের স্বচ্ছ পানিতে মাছ ভেসে বেড়ানো, নানান পাখির কলকাকলি আর আম্রমুকুলের মৌ মৌ গন্ধ যেন মন মাতিয়ে তোলে। সত্যিই অপরুপ এক প্রাণবন্ত চিত্র।
তিনি বলেন, সৃষ্টি দেখেই স্রষ্টাকে চেনা। তাই সবার সংকল্প থাকা উচিত সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে যে অর্থ ব্যয় করবে সেজন্য সৃষ্টিকর্তা তার প্রতিদান দিবে।
জানা যায়, কংচাইরী পাড়া একতা মৎস্য চাষ সমবায় সমিতির মাধ্য্যমেই মায়বিনী লেকটি পরিচালিত হয়। সমিতির সভাপতি অংহ্লাপ্রু মারমা জানান, প্রায় চল্লিশ একর জায়গা জুড়ে লেকটি। করোনা মহামারির আগে বেশ জমজমাট ছিল। এখন আবারো প্রাণ ফিরেছে। করোনার আগে লেক থেকে প্রায় পনের লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করে লেকের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে।
লেকটিকে আধুনিকায়ন করে বিনোদনের কিছু সামগ্রী দিয়ে সাজানো হলে মায়াবিনী হবে জেলার সেরা পর্যটন কেন্দ্র। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এমএন