‘ঠান্ডাতে হাত পাও লাইগতেছে, হামাক কাইয়ো কিছু দেয় না। চরোত বাড়ি হওয়ায় খুব কষ্ট হবার নাইগছে। গরু-ছাগল নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’ ঠান্ডায় কেঁপে কেঁপে কথাগুলো বলছিলেন, পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছড়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া (৬৭)।
উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। রাজারহাট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে জেলায় বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরো জানুয়ারি মাসজুড়ে এ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে মানুষজন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত শুরুর পরই জেলাজুড়ে নামছে শীতের পারদ। ঘন কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। শীত ও কনকনে ঠান্ডায় বিপাকে পড়েছেন খেটেখাওয়া, দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকেই।
পাঁচগাছি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ট্রাক শ্রমিক নওশেদ আলী (৬৮) বলেন, ‘ঠান্ডাত হাত পাও শেংড়ে, হাত পাও ধরে, অবস হয়। গাড়িত কাজ করি। এই ঠান্ডার মধ্যে কাজ করতে খুব অসুবিদে হয়। ঠান্ডার মধ্যে অসুবিদে হইলে আর কি করি পেট বাঁচা নাগবে।’
শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন জেলার সাড়ে চার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষ। একই পরিস্থিতি নদ-নদী সংলগ্ন বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষজনেরও। শীতে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। শীত উপেক্ষা করেই জীবন জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলছেন শ্রমজীবী মানুষজন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
সদর উপজেলার নওয়াবস এলাকার বাঁধে বসবাসরত ভানুমতি (৬৫) বলেন, ‘হামাক কম্বল টম্বল কোন মেম্বর চেয়ারমেন দেয় নাই। হেনে শীত যাবাইছে এতো, কই কম্বল টম্বল কোন কিছুই দেয় না। আইসেও না, দেয়ও না। কই পুরান মেম্বরও না কয়, নয়া মেম্বরও না কয়।’
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে পথঘাট। শীতের কারণে কাজে যোগ দিতে ঘর থেকে বের হওয়া শ্রমজীবীরা পড়েছেন বিপাকে।
সকাল থেকেই কাজের সন্ধানে শহরমুখী রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, ঘোড়ার গাড়িচালক, দিনমজুর ও ব্যবসায়ীদের কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করেই দুর্ভোগ নিয়েই শহরে আসতে দেখা গেছে। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চরাঞ্চলসহ বাঁধসমুহে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, সরকারিভাবে জেলার নয়টি উপজেলার জন্য বরাদ্দের ৩৫ হাজার ৭শ কম্বল ও ১ কোটি ৮ লাখ টাকার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি সংগঠনগুলো যেসব শীতবস্ত্র দিয়েছে সেগুলিরও বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা পুরো জানুয়ারি জুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে।
বাংলা৭১নিউজ/সিএফ