বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: পর্দায় হৃতিকের ম্যাচিসমো আপনাকে মুগ্ধ করবে কি না, সেটা বড় কথা নয়। পরিচালক আশুতোষ গোয়াড়িকর তাঁর চিত্রনাট্যকে কেন স্থিত করলেন ২০১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, তা আগে ভাবাটা জরুরি। হিরো বা হিরোইন নয়, এ ছবির নায়ক হতেই পারে সময়। আপাতত যতটুকু জানা গিয়েছে, তার সারমর্ম— এই ছবির কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে এক যোদ্ধা এবং এক নর্তকী। তাদের প্রেমকথাকেই আশ্রয় করে রেছে এই ‘প্রাগৈতিহাসিক রোম্যান্স’। গোয়াড়িকর তিন বছর ধরে গবেষণা চালিয়েছেন ছবির পটভূমিকাকে যথাযথভাবে নির্মাণ করতে। সাহায্য নিয়েছেন বাঘা বাঘা প্রত্নতত্ত্ববিদদের। তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করেছেন এই ছবির সম্ভাব্য লোকেশন। ঠিক কেন তিনি বেছে নিলেন এই বিশেষ সময় ও ভূগোল, সে ব্যাপারে ডাকখোঁজ করতে গেলে প্রথমেই যেটা নজরে আসে, সেটা ‘মহেঞ্জো দারো’ বা সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে বেশ কিছু রহস্যময় দিক।
• এর আগে অমিশ ত্রিপাঠী তাঁর তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস ‘শিবা ট্রিলজি’-র প্রেক্ষাপট রেখেছিলেন এই সভ্যতা। সেই ভাবনাই কি তাড়া করল আশুতোষকে? অমিশ তাঁর ট্রিলজির প্রথম পর্বের নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য ইমমর্টালস অফ মেলুহা’। ‘মেলুহা’ শব্দটি সুমেরীয় সভ্যতায় ব্যবহৃত একটি টার্ম। এর দ্বারা প্রাচীন সুমেরীয়রা তাদের সঙ্গে বাণিজ্যসম্পর্কযুক্ত একটি নগর-রাষ্ট্রকে বোঝাত। সেই নগর-রাষ্ট্রই কি মহেঞ্জো দারো? জানা যায় না।
• সিন্ধু সভ্যতার নামকরণটা একান্তভাবেই ঘটেছে এই সভ্যতার প্রত্ন-নিদর্শনগুলিকে খুঁজে পাওয়ার উপরে ভিত্তি করে। এই সভ্যতার বিস্তৃতি ঠিক কতটা ছিল, তা আজও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। উত্তরে কাশ্মীরেও এই সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। তবু প্রথম আবিষ্কৃত দু’টি শহর— হরপ্পা আর মহেঞ্জো দারোকেই বার বার গুরুত্ব দিয়েছেন ঐতিহাসিকরা। বাকি নগর— রুপার, লোথাল, কালিবঙ্গান এবং না-আবিষ্কৃত হওয়া আরও আরও নগরীর কাহিনি ঠিক কী, কেউ জানেন কি?
• কোনও সন্দেহ নেই, মহেঞ্জো দারো ছিল একান্তভাবেই নাগরিক সভ্যতা। তবে এখানকার শাসনতন্ত্র সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। অনুমান করা হয়, একধরনের পুরোহিততান্ত্রিক শাসন এখানে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই অনুমান অবশ্যই এসেছে সমকালীন মিশরীয় সভ্যতার গঠন-কাঠামো লক্ষ করে। কিন্তু সত্যিই কি মহেঞ্জো দারো-য় এমন শাসন কাঠামো ছিল?
• সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার আজও সম্ভব হয়নি। আজও তেমন কোনও জীবিত ভাষার সন্ধান পাওয়া যায়নি, যার উপরে ভিত্তি করে পাঠ করা যাবে এই ভাষাকে। লিপির পাঠোদ্ধার না হওয়ায় মহেঞ্জো দারো-র কোনও ‘ইতিহাস’ রচনা সম্ভব হয়নি। ফলত, আমরা আজও জানি না কারা ছিলেন এই সভ্যতার নায়ক-নায়িকা।
• আর এক জনপ্রিয় ভারতীয় লেখক অশ্বিন সাংঘি তাঁর ‘দ্য কৃষ্ণা কি’ উপন্যাসে সিন্ধু সভ্যতার শেষ বিন্দুকে ‘মহাভারত’-এ স্থিত করেন। তিনি দেখান, এই সভ্যতার সঙ্গে লুপ্ত নদী সরস্বতীর বিস্তর যোগ রয়েছে। তিনি আরও দেখিয়েছেন, বৈদিক যুগেও এই সভ্যতা তার মহিমা নিয়েই টিকে ছিল। সরস্বতী নদীর লুপ্তি এই সভ্যতাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। অশ্বিনের মন্তব্য ভিত্তিহীন নয়। তাঁর গবেষণার গোড়ায় রয়েছে আর্যদের ভারতে আগমনের তত্ত্বের বিরোধিতা। তিনি যা দেখিয়েছেন তার মূলে রয়েছে বেশ কিছু প্রত্ন-ঐতিহাসিকের ভাবনা। পরে মার্কিন লেখক স্টিফেন নেপ অসংখ্য সাক্ষ্য উদ্ধার করে দেখিয়েছেন, আর্য আক্রমণ বলে যে কাহিনিকে ভারতের ইতিহাসে প্রবেশ করানো হয়, তার কোনও সত্যতা নেই। ‘আর্য’ একটা সম্বোধন মাত্র, তা কোনও বহিরাগত জাতির নাম নয়। এই তর্কের মীমাংসা আজও হয়নি।
• কতটা ‘অথেনটিক’ হবে ‘মহেঞ্জোদারো’? এই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছেই। আশুতোষ কি নির্ভর করছেন এই বিশাল ঐতিহাসিক গবেষণার উপরে? নাকি নিছক একটা কল্পসময়কে ব্যাকড্রপে রেখে তিনি সামনে দেখাতে চলেছেন হিন্দি সিনেমার চিরাচরিত প্রেমকাহিনিকে? ১২ অগস্টের আগে তা বলা মুশকিল। ততদিন জল্পনা বাড়তে থাকুক।
বাংলা৭১নিউজ/এএফ