বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাকে পাশে নিয়ে দিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে তিস্তা চুক্তি আগামী এক বছরের মধ্যে হবেই বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করলেও, ভারত সরকার আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিল তিস্তা চুক্তি কবে হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন ও সম্মতি ছাড়া তিস্তা চুক্তি হবে না।
আর কেউ নন, স্বয়ং বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আজ বলেছেন, মমতাকে পাশেই নিয়েই তিস্তা জলচুক্তি হবে। সে যখনই হোক না কেন? এখানেই শেষ নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে কোনওভাবেই মোদি সরকার চটাতে রাজি নয় তা বোঝাতে আজ সুষমা স্বরাজ বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তার বিকল্প হিসাবেও যে চারটি নদীর জল বিভাজন নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন আমরা সেই প্রস্তাবও গুরুত্ব দিয়ে সমীক্ষা করেছি।
সেই সমীক্ষার রিপোর্ট যথাসময়ে আমরা মমতাকে জানাব এবং আলোচনাও হবে। সুষমা বলেছেন, একটা কথা স্পষ্ট করে দেওয়া ভালো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেই রাজ্যের স্বার্থ সমন্বিত যে কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তিতেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে অনেক টানাপোড়েনের পর ছিটমহল বিনিময় তথা বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ভূমি সংক্রান্ত চুক্তি সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ণ সমর্থন নিয়েই। এবং সেখানেও তাঁর যে সংশয়গুলি ছিল অথবা শর্ত ছিল সেগুলি সবই আলোচনা করে পূরণ করা হয়েছে।
আর এবারও তিস্তা জলচুক্তি নিয়েও ঠিক একইভাবে মমতার পূর্ণ সমর্থন ও সম্মতি না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য একজোট হয়েই তিস্তা চুক্তি হবে। সেখানে কোনও বিরোধ নেই। মমতার অন্য কিছু দাবিদাওয়া নিয়েও ভারত সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই পথ খুঁজছে সমাধানের। আজ সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী।
সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন করে দুটি নালিশ জানিয়েছেন। যা পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিরোধী।
১) মালদার আম রপ্তানি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ আমের উপর আমদানি শুল্ক এক ধাক্কায় অনেক বাড়িয়ে দেওয়ায়। যেখানে আগে প্রতি কেজিতে সাড়ে ১৩ টাকা করে আমদানি শুল্ক ধার্য করা হত, সেখানে সেই পরিমাণটি বেড়ে হয়েছে সাড়ে ২৯ টাকা প্রতি কেজি। মালদার আমের ৭০ শতাংশই যায় বাংলাদেশে। সুতরাং এই অতিরিক্ত শুল্ক দিতে গিয়ে মালদার আমচাষীরা প্রবল সংকটে পড়েছেন। তাই আম রপ্তানি মার খাচ্ছে। এই সমস্যাটি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত যাতে কথা বলে সেই আরজি করেছেন মমতা।
আর ২) বাংলাদেশের মাথাভাঙ্গা নদীতে এত দূষণ হচ্ছে যে তার জেরে পশ্চিমবঙ্গের অংশে দূষণ মাত্রাছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এমনকী নদী মজেও যাচ্ছে।.
এছাড়া ট্যাংগন, পূনর্ভবা আর আত্রেয়ী নদীর স্রোত কমে যাচ্ছে বাংলাদেশে অতিরিক্ত মাত্রায় বাঁধ আর নদী সংকোচন ব্যবস্থা নেওয়ার জেরে। এই দুটি সমস্যা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গের ওইসব নদীর বেঁচে থাকাই সংকটপূর্ণ হয়ে যাবে আগামীদিনে।
আজ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, মমতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যেসব সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করেছেন আমরা প্রতিটি বিষয়ই খতিয়ে দেখছি। এবং অবশ্যই ওই ইস্যুগুলিতে আমরা দ্বিপাক্ষিক স্তরে আলোচনা করে সমাধানের রাস্তা খুঁজব। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সমস্যাগুলির কথা উত্থাপিত করেছেন সেগুলি আদতে তা তো ভারতেরই সমস্যা।
আমাদেরই দায়িত্ব সেই সমস্যা সমাধানের। আজ সুষমা স্বরাজের আভাসে স্পষ্ট মমতার তোর্সা সংক্রান্ত প্ল্যান নিয়ে আলোচনায় বসেছে সরকার। যদিও বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর ওই বিকল্প প্ল্যান নিয়ে সাফল্য পাওয়া দুষ্কর। কারণ বাংলাদেশ রাজি হবে না। আগামীদিনে মমতার সঙ্গে এই বিষয়ে আবার আলোচনা হবে বলে জানা যাচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা/এসএস