‘যা পামু তাই বেশি, পরে তো সব হারামু। হাতি ঠেহানোর জন্য আমগর নানা কায়দা কানুন করতে অয়। আইতের ঘুম বইলে কিছু থাহেনা। এই হাত্তি আমগর জান মালের জন্য হুমকি। তাই এবার আধাপাহা ধানই টাইডা ফেললাম।’
হাতির আক্রমনে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে না পেরে বার বার ক্ষতির মুখে পরা শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি এলাকার কৃষক রহিম মিয়া বলছিলেন এ কথাগুলো।
শেরপুর জেলার সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি জনপদ শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ বনভুমির সমতলে আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। শ্রীবরদী উপজেলার টিকরকান্দি থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাতা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ এখন রয়েছে হাতি আতঙ্কে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ধান পাকার সময় হলেই বন্য হাতির দল হামলে পরে লোকালয়ের এই পাকা ধান ক্ষেতে। ফসল বাচাতে দিন রাত আগুন, লাইটসহ দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে দিতে হয় পাহারা। তবে অধিকাংশ কৃষক হাতির ভয়ে আধাপাকা ধান কেটেই ঘরে তুলছেন। কৃষকদের দাবি, পরিমানে কম পেলেও বড় ধরণের ক্ষতি হবেনা তাদের। বেশি পাকার জন্য অপেক্ষা করলে এই ফসল হবে হাতির খাবার। সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।
আদিবাসী কৃষক হিমেল চিরান বলেন, আমি ১৫ কাঠা জমি চাষ করেছি। আরও সপ্তাহ খানেক পরে কাটলে সম্পূর্ণ ধান পেকে যেতো। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও ভরসা নেই। কখন যেন হাতি চলে আসে। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে আছি।
কৃষক ছাদেক আলী বলেন, অল্প জমি আবাদ করি। গতবার হাতির দল পায়ে পিষ্ট করে সব ধান নষ্ট করেছে। এবার অর্ধেক ধান পাকতেই কেটে ফেললাম। অর্ধেক হলেও তো ঘরে তুলতে পারলাম। এছাড়াও গতবার গরুর খাবার হিসেবে খড় পাইনি। এবার খরের অভাব হবেনা।
নালিতাবাড়ি উপজেলার মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বন বিভাগ হাতির ক্ষতির জন্য কৃষকদের ক্ষতিপুরন দিবে। রেকর্ডভুক্ত জমিতে ফসলের ক্ষতি হলে তাদের আবেদন করতে হবে। পরে যাচাই বাছাই করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, আশি ভাগ ধান পাকার পর কৃষক ধান কেটে নিয়ে আসবে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আধাপাকা ধান কাটলে পরিমাণে ধান কম পাওয়া যাবে। তবে সতর্ক অবস্থানে থেকে আশি ভাগ পাকার পর ধান কাটার পরামর্শ তার।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ