ভোলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিং, মাগুর, টাকি, শোল, বাইন, কৈ ও পাবদাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি প্রজাতির মাছ। ফলে দেশি প্রজাতির এসব মাছ খাওয়া তো দূরের কথা সচরাচর চোখেও পড়ে না। ফলে দেশি মাছ খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি মাছ চাষ শুরু হচ্ছে ভোলায়। অন্যদিকে প্রাথমিক পর্যায়ে শতাধিক চাষি দেশি প্রজাতির মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
তাছাড়া দেশি শিং, টাকি, শোল, বাইন ও কইসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাহিদা, দাম বেশি ও কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় নতুন নতুন অনেক চাষি এ জাতের মাছের চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভোলা শহর ও গ্রামের পুকুর, খাল-বিলে পাওয়া যেত দেশি শিং, জাগুর, টাকি, শোল, বাইন, কই, পাবদা ও গুলশাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। কিন্তু কালের বিবর্তনের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে এসব প্রজাতির মাছ।
এ কারণে এখন শহর ও গ্রামের বাজারে দেখা মেলে না এসব মাছের। তবে এবছর পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ভোলা সদর উপজেলায় শতাধিক মাছ চাষিকে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি শিং, মাগুর, টাকি, শোল, বাইন, কই ও ব্লার্ককাপ মাছ চাষ শুরু করেন।
পরীক্ষামূলকই সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। বাজারে দেশি প্রজাতির চাষের চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে দেশি প্রজাতির মাছ চাষের পরিকল্পনা নিচ্ছেন চাষিরা।
ভোলা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য চরনোয়াবাদ এলাকার মো. মোস্তাফা কামাল বাবুল জানান, আগে আমাদের পৌর এলাকা কিংবা গ্রামের পুকুরে বিভিন্ন দেশি মাছ পাওয়া যেত। আমরা ওইসব মাছ কিনে খেতাম। কিন্তু বর্তমানে দেশি মাছ পুকুর, খাল-বিলে পাওয়া যায় না। বাজারেও বিক্রি হয় না। যে কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের দেশি প্রজাতির মাছ খাওয়াতে পারছি না।
ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শেরেবাংলা বাজার এলাকার মো. জসিম উদ্দিন জানান, একটি এনজিও থেকে তাকে দেশি প্রজাতির মাছ চাষ করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে বিনামূল্যে শিং, মাগুর, টাকি, শোল, গুলশাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি প্রায় ১ হাজার মাছ দেওয়া হয়। পরে তিনি তার ৮ শতাংশ জমির পুকুরে ওইসব মাছ চাষ শুরু করেন। মাছগুলোকে খাবার খাইয়ে বড় করছেন।
তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত ২ হাজার টাকার খাবার খাইয়েছেন। তিনি পুকুরে জাল ফেলে দেখেছেন প্রচুর মাছ রয়েছে। বাজারে বিক্রি করলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারবেন বলে দাবি করেন।
ভোলা সদর উপজেলার চর সামাইয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিরহাট গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ জানান, তিনিও ওই এনজিও থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির দিকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূলে ১ হাজার ৫০০ দেশি শিং ও বিভিন্ন প্রজাতির ৫০০ দেশি মাছ পেয়েছেন। প্রায় ১০ মাসের মতো খাবার খাইয়ে মাছগুলো বড় করে তুলেছেন। খাবার ও পুকুর তৈরিতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এবছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফলতা পেয়েছি। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে ৫ থেকে ৬ হাজার শিং, মাগুর, টাকি, শোল, বাইন, কই, পাবদা, গুলশা ও ব্লার্ককাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের চাষ করবো। আশা করছি আরও বেশি লাভবান হবো।
ভোলা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য চরনোয়াবাদ এলাকার মো. আব্দুল্লাহ জানান, আমাদের দেশি প্রজাতির শিং, মাগুর, টাকি, শোল, বাইন, কই ও ব্লার্ককাপ মাছ চাষ করতে খরচ অনেক কম। বাজারে চাহিদা বেশি ও দামও বেশি। তিনি এবছর তার পুকুরের শিং, মাগুর, টাকি, শোল, বাইন, কই, পাবদা, গুলশা ও ব্লার্ককাপ মাছের চাষ করবেন।
ভোলা গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ঐশী মজুমদার জানান, এবছর তারা ভোলা সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক মাছ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে পরীক্ষমূলকভাবে দেশি শিং, মাগুর, টাকি, শোল, বাইন, কই, পাবদা, গুলশা ও ব্লার্ককাপ মাছ চাষ করিয়েছেন। বিনামূল্যে চাষিদের মাছ দেওয়ার পাশাপাশি চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শও দিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, পরীক্ষামূলকভাবে মাছ চাষ করে চাষিরা সফল হয়েছেন। মাছ চাষিরা আমাদের জানিয়েছেন, ছোট আকারের খামারে ২৫ থেকে ৩০ হাজার ও মাঝারি আকারের খামারে ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে।
তবে আগামীতে বাণিজ্যিভাবে বড় পরিসরে এ জাতের মাছ চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এছাড়া পর্যায়ক্রমে আমরা ভোলার অন্যান্য উপজেলায়ও এ জাতের মাছ চাষ করবো।
বাংলা৭১নিউজ/সিএফ