বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ২০১৮ বিশ্বকাপে আমরা নতুন কী কী দেখছি? দুটো দেশের অভিষেক হচ্ছে – আইসল্যান্ড এবং পানামা। দলগুলোতে নতুন অনেক মুখ। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি এবার বিশ্বকাপে সংযোজিত হয়েছে তা হলো ভিএআর।
মাঠে রেফারির যে সব সিদ্ধান্ত (যেমন – লাল কার্ড, পেনাল্টি, গোল) ম্যাচের ফলাফল বদলে দিতে পারে, সেগুলো যেন যতটা সম্ভব নির্ভুল হয়, সেজন্য ভিডিও রেফারির প্রবর্তন করা হয়েছে এবারের বিশ্বকাপে।
একটি ভিডিও নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রেফারির চারজন সহকারী বসে দুই ডজন ক্যামেরায় বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে তোলা ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছেন। মাঠে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের সন্দেহ হলে, তারা ইয়ারপিসে রেফারিকে সেই ফুটেজ পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন।
রেফারি চাইলে খেলা থামিয়ে মাঠের পাশে বসানো স্ক্রিনে স্লো-মোশনে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলের ফুটেজগুলো দেখতে পারেন। এবং চাইলে তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন। রেফারির নিজের সন্দেহ হলেও সহযোগী ভিডিও রেফারির সহযোগিতা চাইতে পারেন তিনি।
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম তিনদিনেই কয়েকবার ভিএআর প্রয়োগ হয়ে গেছে।
শুক্রবার সোচিতে পর্তুগাল ও স্পেনের মধ্যে ম্যাচটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। কারণ, এই প্রথম বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে ভিএআর প্রয়োগ করে একটি গোল নিশ্চিত করা হয়েছিল। গোলটি দিয়েছিলেন স্পেনের দিয়েগো কস্তা।
কিন্তু ইতালিয়ান রেফারি জিয়ানলুকা রচ্চির সন্দেহ হয়েছিলো গোলের আগে কস্তা কি পর্তুগালের পেপেকে ফাউল করেছিলেন? ভিএআরের সাহায্য নিয়ে তিনি গোলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন।
যেমনটা সবাই জানেন যে বিশ্বকাপে এরই মধ্যে কয়েকবার ভিএআর-এর প্রয়োগ হয়েছে। কিন্তু ভিএআর ব্যবহারের এই সিদ্ধান্ত আরো ১০, ২০ বা ৩০ বছর আগে নেয়া হলে বিশ্বকাপের ইতিহাস কি অন্যরকম হতো পারতো?
এ বিষয়ে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন রাশিয়ার সোচিতে বিবিসির ফার্নান্দো দুয়ার্তে।
মনে আছে সেই বহুল আলোচিত “ঈশ্বরের হাত” গোলটির কথা?
যারা শোনেননি তাদের জ্ঞাতার্থে – কোয়ার্টার ফাইনালে সমানে-সমানে লড়ছিল ইংল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা। তারপর হঠাৎ ইংল্যান্ডের গোলের সামনে জটলা থেকে ম্যারাডোনার বাম হাত দিয়ে ঠেলে দেয়া বলটি পিটার শিল্টনকে ফাঁকি দিয়ে গোলে ঢুকে যায়।
পরে অবশ্য তার অসামান্য ড্রিবলিংয়ের কল্যাণে পুরো ইংলিশ দলকে পাশ কাটিয়ে আরো একটি দৃষ্টিনন্দন গোল করেন ম্যারাডোনা। ২-০ তে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
পরে ইংলিশ স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার ৮০ মিনিটের মাথায় একটি গোল শোধ করেন।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে যদি সেদিন ভিএআর থাকতো, রেফারি অবশ্যই ধরে ফেলতেন যে ম্যারাডোনা মাথা দিয়ে নয়, হাতটি দিয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন।
সে বছর বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ভিএআর থাকলে ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতে পারতো।
বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম শ্বাসরুদ্ধর ম্যাচ।
বেবেটো এবং রোমারিওর গোলে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ডাচরা। পর পর দুটো গোল পেয়ে যান ডেনিস বার্গক্যাম্প এবং অ্যারন উইন্টার। কিন্তু ৮১ মিনিটের মাথায় ব্রাঙ্কোর ফ্রি-কিক থেকে পাওয়া গোলে ব্রাজিল কোয়ার্টার-ফাইনাল জিতে সেমিফাইনালে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত তারা শিরোপাও জেতে।
কিন্তু তখন ভিএআর থাকলে ব্রাঙ্কো হয়তো ফ্রি-কিক পেতেনই না – কারণ ওই ফ্রি-কিক পাওয়ার আগে তিনি মার্ক ওভারমারসকে পরিস্কার ফাউল করেছিলেন।
ফলাফল নির্ধারণী ওই গোলের সময় ডাচরা খুবই ভালো খেলছিল। কে জানে, ব্রাজিল ফ্রি-কিকটি না পেলে হয়তো ১৯৯৪ বিশ্বকাপের পরিণতি অন্যরকম হতে পারতো।
সেই একই বিশ্বকাপ, অন্য আরেক বিতর্ক।
বোস্টনে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলছিল ইতালি এবং স্পেনের মধ্যে। ২-১ পিছিয়ে পড়লেও ইতালিকে প্রচণ্ড চাপে ফেলেছিলো স্পেন। একবারে শেষ দিকে ইতালির গোলমুখে তার উদ্দেশ্যে দেওয়া একটি বলের নাগাল পেলেন না স্পেনের লুইস এনরিকে। কারণ তার মুখে কনুই দিয়ে আঘাত করেছিলেন ইতালিয়ান ডিফেন্ডার মাউরো তাসোত্তি।
পেনাল্টি তো অবশ্যই স্পেনের পাওনা ছিল, একই সাথে লাল কার্ড?
দুঃখের বিষয়, হাঙ্গেরিয়ান রেফারি স্যান্ডর পুহল এবং তার সহকারীরা তা দেখতে পাননি।
এনরিকের মুখমণ্ডল রক্তাক্ত হয়ে পড়লেও, রেফারি অনড় রইলেন।
পরে অবশ্য তাসোত্তি আট ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন এবং ফাইনালে মাঠে নামেতে পারেননি। কিন্তু ঐ ম্যাচে হেরে স্পেনকে বিদায় নিতে হয়েছিল। ভিএআর থাকলে কাহিনী হয়তো বদলে যেতে পারতো।
কোথা থেকে শুরু করা যায়?
একটি ম্যাচে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছিল স্পেন।
দুটো বৈধ গোল নাকচ করে দেন মিশরের রেফারি গামাল ঘানডুর। একাধিকবার স্পেনের খেলোয়াড়দের অফসাইড কল করেন তিনি – যদিও সেগুলো দৃশ্যত অফ-সাইড ছিল না।
১২০ মিনিট ধরে খেলার পর গোলশূন্যভাবে শেষ হয় ম্যাচ। পেনাল্টি শুট-আউটে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয় স্পেনকে।
তারপর ইতালির বিরুদ্ধেও বিতর্কিত জয় পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যায় আয়োজক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। গোলের সামনে ডাইভ করার জন্য দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড পাওয়ায় বহিষ্কৃত হন ইতালির ফ্রান্সেসকো টটি।
যদিও অনেকেই বলেছিলেন, রেফারির সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি – টটি ইচ্ছা করে পড়ে যাননি।
সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু ভিএআর থাকলে সেই সৌভাগ্য কি তাদের হতো?
আয়োজক দেশ ব্রাজিল সাও পাওলোতে তাদের প্রথম ম্যাচে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল।
দশ মিনিটের মাথায় মার্সেলোর আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। অবশ্য নেইমার গোল করে সমতা আনেন। তবে ক্রোয়েশিয়া অপেক্ষাকৃত ভালো খেলছিলো এবং মনে হচ্ছিলো তারাই জিতবে।
কিন্তু ৭০ মিনিটের মাথায় ক্রোয়েশিয়ার গোলের সামনে তাদের ডিফেন্ডার দিয়ান লোভরেনের সাথে সামান্য ধাক্কা খেয়েই পড়ে যান ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড ফ্রেড।
জাপানী রেফারি উইচি নিশিমুরা পেনাল্টি দিয়ে দেন – নেইমার গোল করে ২-১ গোলে এগিয়ে নেন ব্রাজিলকে।
তখন ভিএআর থাকলে কি পেনাল্টি পেত ব্রাজিল?
হয়তো না।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিবিসি/এসএস