দিগন্ত জোড়া মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরো ধানের সোনালি শীষ। সেই ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে নিয়, আবার কেউ ভ্যানে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন ধান। তবে কৃষকের মুখে হাসি নেই। তারা বলছেন, এবার ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে বেশি। অথচ সেই তুলনায় বাজারে দাম নেই। তাদের লোকসান হবে।
এ চিত্র নীলফামারীর জেলার। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ২২ হাজার ৭০ টন। এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে।
তরনীবাড়ী এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল হোসেন বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বিক্রি হবে ৩৮ হাজার টাকার। ধানের দাম যদি বাড়তো তাহলে ধান চাষে পোষাতো। ধানের বাজার খারাপ। এ বাজারে ধান চাষ করে লাভ নেই।’
এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান নীলফামারীর লক্ষ্মীচাপ নিমতলী এলাকার কৃষক ললিত চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘এবছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। পোকার আক্রমণও ছিল তুলনামূলক কম। তবে দীর্ঘ খরা থাকায় বাড়তি সেচ দিতে গিয়ে খরচ বেড়েছে। ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের লাভ কম হবে।’
শহরের মানিকের মোড় এলাকার কৃষক রজব আলী বলেন, ‘বিদ্যুৎ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি—সবকিছুর দাম বাড়তি। অথচ ধানের সেরকম দাম নেই। এত অল্প লাভে ধান চাষ করা মানেই লোকসান।’
মীরগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে প্রতিমণ হাইব্রিড জাতের ধান বিক্রি হয়েছে ১১৫০ টাকা মণ। এখন সেই ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-১০০০ টাকা মণ। কৃষকরা বলছেন, এই দামে ধান বিক্রি করে লাভ হবে না। নিরুপায় হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক হাসান বলেন, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ছিল কম। কীটনাশকের ব্যবহারও লেগেছে অল্প।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত সদরে ১৫ শতাংশ ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে। চলতি মাসেই বাকি ধানগুলো কাটা শেষ হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম আবু বক্কর সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার ৩২ টাকা কেজি দরে ধান কিনবে। সে হিসেবে এক বস্তা ধানের দাম দুই হাজার ৪০০ টাকা। সরকারি রেটে ধান কেনা শুরু হয়নি, তাই হয়তোবা দাম কম।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ