গত বছর ধানের ভালো দাম পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমে ব্যাপকভাবে বোরো চাষ করছেন চাষিরা। এরই মধ্যে বোরো চাষকে ঘিরে মাঠে মাঠে যেন উৎসব শুরু হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, ধানের দাম ভালো পেয়ে আরও উৎসাহ নিয়ে আবাদ করছেন। তবে এবছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
এদিকে সরেজমিনে সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা, ইসলামপুর, সুন্দরপুর, শিবগঞ্জ উপজেলার, ভাঙ্গা ব্রিজ, শ্যামপুর, বিনোদপুর, সোনামসজিদ, খাষেরহাট, গোমস্তাপুর উপজেলার, রহনপুর ও লালকপরাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা।
কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে পানি সেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার, টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ। মাঠ সমান করার জন্য গরু-মহিষ দিয়ে চলছে মইয়ের কাজ । কোনো কোনো স্থানে গরু ও পাওয়ার টিলার ছাড়া কৃষকদের মই টেনে জমি সমান করার দৃশ্য দেখা গেছে।
আবারও বোরো ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কৃষকদের শরীরে রয়েছে হালকা শীতের পোশাক, মাথায় গরম কাপড়। কেউ জমিতে হাল চাষ করছেন, কেউ জমির আইলে কোদাল কোপাচ্ছেন।
কেউ আবার জৈব সার দিতে ব্যস্ত, সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ বা পাম্পের জন্য ঘর তৈরি করছেন। অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। কেউ আবার বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে তা রোপণ করছেন। সব মিলিয়ে আনন্দে রয়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা।
গোমস্তাপুর উপজেলার বোরো ধান চাষি কলিমুদ্দিন বলেন, গত বছর আমন চাষাবাদ করে লাভবান হয়েছি। এবারও সেই আশায় ৪ বিঘা জমিতে বোরো চাষ শুরু করেছি। বোরো ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। দুইদিনের মধ্যে সব জমি প্রস্তুত করে ধান রোপণ করব।
সদর উপজেলার সুন্দরপুর এলাকার বোরো চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, গত আমন মৌসুমে ব্রি-৮১, জিরাশাইলসহ বিভিন্ন ধানের ফলন ও বাজার মূল্য ভালো ছিল, তাই অনেক আয় করেছি।
এজন্য চলতি মৌসুমে আবাদ করতে ভালো লাগছে। সম্প্রতি আমার জমিতে সরিষা তুলে এখন বোরো ধান রোপণের জমি জন্য প্রস্তুত করছি। কয়েকদিনের মধ্যে জমিতে বোরো ধান রোপণ করব।
ইসলামপুর এলাকার সামিম আলী জানান, গত বছর ১০ কাঠা জমিতে বোরে ধান রোপণ করেছিলাম। এতে ১০ মণ ধান পেয়েছিলাম ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আর খড় বিক্রি করেছি ৩ হাজার টাকার। এ খড় বিক্রির টাকায় আমার খরচ উঠে গেছে। এবার ফের ২৫ কাঠা জমিতে বোরো ধান রোপণ করার জন্য জমি প্রস্তুত করছি।
গোমস্তাপুর উপজেলার কমলা রানী জানান, গত বছর করোনার কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বাইরে কাজে যেতে পারিনি। এলাকায় তেমন কোনো কাজ না থাকায়, পরিবারের মধ্যে অভাব অনটন লেগেই আছে। তাই বোরো মৌসুমে সকালে কুয়াশা ও ঠান্ডার পরিমাণ বেশি হলেও বোরো ধান লাগাতে এসেছি। আমরা ধান রোপণ করে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি পায়।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর থেকে ধানের দাম ভালো হওয়ায় ধান চাষে ভীষণ আগ্রহী হয়েছেন চাষিরা।
জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০২০০ হেক্টর জমি বোরো ধান চাষের জন্য প্রস্তুত করেছেন কৃষকরা। তবে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। গত বছর ৫০১২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান ছিল। আশা করা যাচ্ছে, গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে