ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে পড়ে থাকা নারীর পরিচয় মিলেছে। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার (১২ মে) মরদেহ নিহতের ভাইয়ের কাছে পুলিশ হস্তান্তর করলেও শিশু জিহাদ হোসেনকে হস্তান্তর করা হয়নি। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় ওই শিশুর চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
তবে এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিশুটির মামা রবিন মিয়া। রোববার (১২ মে) বোনের মরদেহ ও ভাগনেকে নিতে আসেন রবিন মিয়া।
তিনি জায়েদার বড় ভাই দাবি করে বলেন, জায়েদার একাধিক বিয়ে হয়েছে। ভালুকা এলাকায় থেকে কখনো গার্মেন্টে, কখনও জুতার কারখানায় কাজ করে জীবন চালাতেন। বোনের মরদেহ দিলেও ভাগনেকে হস্তান্তর না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ভালুকার ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনাতেই নারীর মৃত্যু ও শিশুটি আহত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে। ওই নারী প্রায়ই গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতেন।
অপরদিকে শিশুটির মামা দাবি করা রবিন শিশুটিকে নিতে চাইলে রোববার দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সমাজসেবা বিভাগ শিশুটির বিষয়ে বৈঠক করে। শিশুটির প্রকৃত অভিভাবক নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সমাজসেবা অধিপ্তর ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক আ. কাইয়ুম বলেন, বিষয়টি যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে, অনেকে পরিচয় দিয়ে শিশুটিকে নিতে আসতে পারে। আমরা উপযুক্ত কাগজপত্র ছাড়া হস্তান্তর করলে বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়। পর্যাপ্ত কাগজপত্র নিয়ে আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে হস্তান্তর করবে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাইন উদ্দিন বলেন, শিশুটি যেন ভালোভাবে মানুষ হতে পারে, তার ভালো দিক চিন্তা করে প্রশাসন ও সমাজসেবার সঙ্গে আলাপ করে হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ কামাল আকন্দ বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা মনে হলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, কোনো একটি প্রাইভেটকার চাপা দিয়ে আহত করে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন বলেন, নারীর প্রকৃত স্বজন নিয়ে কোনো সন্দেহ তৈরি না হওয়ায় মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার কুসিউড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিনের মেয়ে নিহত জায়েদা (৩০)। তিনি ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি আইডিয়াল মোড় এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে দুর্ঘটনার শিকার হন জায়েদা ও তার শিশু সন্তান জাহিদ।
জায়েদাকে শিশু সন্তানসহ ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে। কয়েকজন লোক তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখেই দ্রুত চলে যান। পরে তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে জায়েদার মৃত্যু হয়।
আর শিশু সন্তান জাহিদকে ভর্তি করা হয় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানেই বর্তমানে চিকিৎসা চলছে তার। মায়ের মৃত্যুর পর শিশুটির কান্না দেখে তাদের পরিচয় শনাক্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হলে শনিবার রাতে পরিচয় শনাক্ত হয়।
জায়েদার মৃত্যুর ঘটনায় ভরাডোবা হাইওয়ে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত গাড়ির বিরুদ্ধে রোববার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জায়েদার ময়নাতদন্ত শেষে ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করে বলে নিশ্চিত করেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মাইন উদ্দিন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ