বরগুনার বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাটে বিষখালী নদী পারাপারে ইজারাদারদের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। ঈদুল আজহায় যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নির্ধারিত ভাড়ার দশগুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও যাত্রী হয়রানি, অসদাচরণ, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, অদক্ষ চালক, অপর্যাপ্ত ও ত্রুটিযুক্ত ট্রলার দিয়ে নদী পারাপারসহ বিভিন্ন অভিযোগ তো রয়েছেই। বরাবরই ঈদের সময় চাঁদাবাজি চলে ইজারাদারদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো খেয়া পরিচালনা করছেন ইজারাদার। খেয়া পারাপারের জন্য যাত্রীরা নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইলে টোল আদায়কারীরা খারাপ ব্যবহার করছেন। যাত্রীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটছে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় ঘাট ইজারাদাররা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাটের কাঁঠালিয়া পয়েন্টের কচুয়া গ্রামের ঘাট ইজারাদার রুস্তুম আলী হাওলাদার ও নুরুল হক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় যাত্রীদের রীতিমতো জিম্মি করে বিষখালী নদীর কচুয়ার পাড় থেকে ভাড়া আদায় করছেন। ভাড়া আদায় নিয়ে প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া ও মারধরের ঘটনা ঘটছে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে বরগুনা জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নাহিদ মাহমুদ লিটুসহ একাধিক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীনের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। এছাড়া একাধিক ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া এবং এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ইত্যাদির প্রতিকার দাবি করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, যাত্রী পারাপারে সরকারের নির্ধারিত ভাড়া পাঁচ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে ঈদের সময় ৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রি পারাপারের নিয়ম থাকলেও একই পরিমাণে টাকা আদায় করা হচ্ছে। ঈদের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল পারাপারে ১০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, বাইসাইকেল ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া পাঁচ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, আসবাবপত্র ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা ও হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়।
একাধিক যাত্রী জানান, যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিকার হওয়া দরকার। বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা দিলীপ হাওলাদার বলেন, কচুয়া থেকে বেতাগীতে আসার সময় ভাড়া আদায়কারী রুস্তুম এক ভিক্ষুকের কাছ থেকে ৫০ টাকা হাতিয়ে নিল। আমরা নিষেধ করার পরও শোনেনি সে।
ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পারাপারের নিয়ম। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার পরই ওই বিষখালী নদী থেকে পার হতে হলে চাইলে তার কাছ থেকে রিজার্ভ হিসেবে ৫০০-৮০০ টাকা আদায় করা হয়। একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, মাত্র দুটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার যাত্রী পারাপার চলে। এতে বেশিরভাগ সময় চাকরিজীবীদের অফিসে যেতে বিলম্ব হচ্ছে। এতে ভোগান্তি ও হয়রানি বাড়ছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে টোল আদায়কারী মো. রুস্তুম আলী জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় এবং অনেকে ভাড়াও দেয় না। এছাড়া নেতাদের এবং প্রশাসনের অনেককে টাকা দিতে হয়। মোটরসাইকেলের জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপন জানান, বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিকারের জন্য উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি করেছি।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি শুনেছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ