বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশে একটা সময় মূল খেলাটাই ছিল ফুটবল। দেশের মাঠেও যেমন দাপটের সঙ্গে গড়াত ফুটবল, তার আমেজ থাকত গ্যালারিতে। কালের বিবর্তন নাকি কর্তাব্যক্তিদের সদিচ্ছার অভাব অথবা ফুটবল ফেডারেশনজুড়ে দুর্নীতির বসবাস কিংবা নব্বই দশকের পর থেকেই খেলাটার বিবর্ণ দশা; সে প্রসঙ্গে আপাতত যাওয়া না যাক। তবে চারদিকে ক্রিকেটের জয়জয়কারে দেশীয় ফুটবল মরছে দর্শক আর সমর্থনের হাহাকারে।
ক্রিকেট ফুটবলের জনপ্রিয়তার জায়গাটা পুরোপুরি নিয়ে নিলেও নির্দিষ্ট একটা সময়ে এসে কিন্তু সাকিব আল হাসানদের প্রতি মানুষের আগ্রহটা থাকে কম। সে সময়টায় অবশ্য বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা নিজেরাও ব্যস্ত হন ফুটবল নিয়ে। চার বছর পর পর দুয়ারে হাজির হওয়া ওই সময়টুকু শুধুই বিশ্বকাপের। ক্রিকেট বা অন্য কোনো খেলা গোনায় ধরার সময়টাও যেন নেই কারোরই।
যোজন যোজন দূরত্বের দুই দেশ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল বাংলাদেশের কাছে সাত সমুদ্রের ওপারের কোনো ভূখণ্ডই। কিন্তু ফুটবলের হাত ধরে সেই আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলই হয়ে গেছে বাংলাদেশের পরমপ্রিয় দুটি দল। নীল-আকাশি আর হলদে রঙের জার্সি দুটোতে যেন প্রাণ খুঁজে পান লাল-সবুজের দেশের মানুষরা। আর সে কারণেই উন্মাদনাটা শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপের প্রায় এক মাস আগ থেকেই।
বিশ্বকাপ এলেই বাংলাদেশের শহরগুলো যেন সেজে ওঠে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা দিয়ে। গ্রামগুলোতেও লাগে সবুজ আর আসমানি পতাকার ধুম। আর দুদলের সমর্থকদের মধ্যকার ‘কে সেরা’ নিয়ে বাকবিতণ্ডা ছাড়া তো বোধ হয় বিশ্বকাপই পায় না পরিপূর্ণ আমেজ।
ইদানীং অবশ্য শুধু এ দুটি দলেই আটকে নেই বাংলাদেশিদের সমর্থন। ইদানীং বাড়িগুলোর ছাদে দেখা যায় স্পেন, জার্মানির সঙ্গে পর্তুগাল কিংবা ফ্রান্সের পতাকাও। আর্জেন্টিনা তো সেই ১৯৭৮ সালে জিতেছিল বিশ্বকাপ, ব্রাজিলও শেষবার কাপ পেয়েছে সেই ২০০২ বিশ্বকাপে। ফলে কিশোর কিংবা উঠতি বয়সের দর্শকদের কাছে অন্য দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতাটা একটু বেশিই।
সময়ের আবর্তনে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ঘিরে রেখেছে আমাদের সবাইকে। বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তেজনা এখন বরং ওই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর টুইটারেই দেখা যায় বেশি। প্রায় প্রতিটি দলেরই রয়েছে বাংলাদেশি ফেসবুক ফ্যান গ্রুপ। লিওনেল মেসির ভক্তরা তাঁর গুণগান গেয়ে যদি করে পোস্ট, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা নেইমার সমর্থকদের একটুও দেরি হয় না, তাদের আদর্শদের সেরা বানানোর চেষ্টার।
এই ক্রিকেট আর ফুটবল নিয়ে বেশ পুরোনো একটা প্রবাদের প্রচলন আছে। ‘ফুটবল ছিল প্রথম ভালোবাসা, পরে জোর করে ক্রিকেটের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে’—বিশ্বকাপের আসর এলেই যার প্রমাণ পাওয়া যায় পুরোদমে। ফুটবলের প্রতি এই জোয়ার যেন এ দেশের মানুষের একদম অন্তরটা থেকেই আসে। তাই বিশ্বকাপ মাঠে গড়ালে অমন উৎসবের আমেজের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের স্বর্ণালি সময়ের কথা ভেবে একটু আফসোসও কি জাগে না বাংলাদেশিদের মনে?
সে জাগলেও জাগতেই পারে। তবে সব ভুলে আসছে জুন মাসে বাংলাদেশ আবারও মাতবে বিশ্বকাপের আনন্দে। কারো দল ঘরে ফিরবে ট্রফি কাঁধে নিয়ে, কারো আবার সঙ্গী হবে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। এমন হাজারো অনুভূতির জন্ম দিতেই আগামী ১৪ জুন রাশিয়ার মাঠে গড়াবে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপকে বরণ করে নিতে ঠিক যতটুকু প্রস্তুত রাশিয়া, বাংলাদেশও তৈরি ঠিক ততটুকুই।
বাংলা৭১নিউজ/বিকে