দেশে এ প্রথম বঙ্গোপসাগরে যাত্রা শুরু করেছে যাত্রীবাহী বিলাসবহুল প্রমোদতরি বে ওয়ান ক্রুজ শিপ। রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর আনোয়ারায় শিপইয়ার্ড টার্মিনালে জাহাজটির সমুদ্রযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় জাহাজটি কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে। সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হবে বিকেল সাড়ে ৩টায়। সময় লাগবে মাত্র তিন ঘণ্টা। আগে এ নৌপথে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে সময় লাগত প্রায় ছয় ঘণ্টা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে জাপান থেকে অত্যাধুনিক জাহাজটি নিয়ে এসেছে ‘কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, কক্সবাজারের দুই এমপি আশেক উল্লাহ ও সাইমুম সরওয়ার, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান ও পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র দাশ।
স্বাগত বক্তব্য দেন কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ রশিদ।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের পযর্টনশিল্পের উন্নয়নে জাপান থেকে বিলাসবহুল জাহাজ বে ওয়ান ক্রুজ শিপ দেশে নিয়ে এসেছেন পযর্টনবান্ধব ব্যবসায়ী প্রকৌশলী এম এ রশিদ। বে ওয়ান কক্সবাজারের পযর্টনশিল্পের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, পর্যটনকে ধরে রাখার সব উপকরণ আমাদের আছে। কিন্তু এত দিন নিরাপদ ভ্রমণের সুযোগ-সুবিধা ছিল না বলে পযর্টকদের টানতে পারিনি। বে ওয়ান সে সমস্যা দূর করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দুই উপমন্ত্রীসহ দুই হাজার যাত্রী নিয়ে জাহাজটি কর্ণফুলী নদী থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় জাহাজটি কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়।
বে ওয়ান ক্রুজ শিপের কক্সবাজারের সমন্বয়ক হোসাইন বাহাদুর বলেন, জাপান থেকে আনা বিলাসবহুল এই জাহাজে ১৭ জন ক্রু ছাড়াও যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবেন আরও অতিরিক্ত ১৫০ ক্রু। ৪৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫৫ ফুট প্রস্থের এই জাহাজের উত্তাল সমুদ্র মোকাবিলার সক্ষমতা আছে। যাত্রীর ধারণক্ষমতা দুই হাজার। এটি ঘণ্টায় ২৪ নটিক্যাল মাইল বেগে চলবে।
হোসাইন বাহাদুর আরও বলেন, কক্সবাজার থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় এ জাহাজ সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে। টিকিটের মূল্য আড়াই থেকে চার হাজার টাকা। কেবিনে ভাড়া পড়বে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত এ জাহাজ চলাচল করবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই যাত্রীদের পারাপার করা হবে। স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ, রাত্রিযাপন এবং বিভিন্ন স্বাদের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থাও আছে এ জাহাজে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, আগে টেকনাফের নাফ নদী দিয়ে ৯টি জাহাজে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যেতেন দৈনিক ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটক। এখন ওই নৌপথে চলাচল করছে মাত্র তিনটি জাহাজ। আর কক্সবাজার থেকে চলাচল করছে একটিমাত্র জাহাজ। এখন দ্রুতগতির জাহাজ বে ওয়ান চালু হলে পর্যটকরা কম সময়ে নিরাপদে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি জাহাজে রাতযাপনের মাধ্যমে সমুদ্র বিনোদনও উপভোগের সুযোগ পাবেন। এতে পর্যটনশিল্পে নতুনমাত্রা যুক্ত হবে।
যাত্রা : কক্সবাজার থেকে ছাড়বে সকাল ৮টায়, সেন্টমার্টিন পৌঁছবে বেলা ১১টায় ও সেন্টমার্টিন থেকে ছাড়বে বিকাল ৪টায়, কক্সবাজার পৌঁছবে সন্ধ্যা ৭টায়।
ভাড়ার তালিকা: ইকোনমি- ২৫০০ টাকা, আসন সংখ্যা- ৩০০ +, বিজনেস ক্লাস- ৩০০০ টাকা, আসন সংখ্যা- ২০০+, ওপেন ডেক- ৪০০০ টাকা, আসন সংখ্যা-১০০ +, ভি আই পি কেবিন- ২৫,০০০ টাকা, আসন সংখ্যা- ৪ টা, ভি ভি আই পি কেবিন- ৩০,০০০ টাকা, আসন সংখ্যা- ২৮টা।
বাংলা৭১নিউজ/সর