অবরোধ কর্ম সূচির আজ শেষ দিন। বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে পুলিশি হামলা, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারসহ সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পরে জামায়াত ইসলামী তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, লেবার পার্টি, এনডিএমসহ সরকার পদত্যাগের যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দলগুলো আলাদাভাবে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।
বিএনপির ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় ৪টিসহ সারা দেশে মোট ১৩টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও পাবনার ঈশ্বরদীতে পণ্যবাহী চারটি ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঈশ্বরদীতে চলন্ত ট্রেনে ককটেল ও পেট্রলবোমা ছোড়া হয়েছে। এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
আগের দিনের সংঘর্ষে আহত কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আশিক মিয়া (৫০) নামের এক চা–বিক্রেতা গতকাল মারা গেছেন। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনের সহিংসতায় পুলিশের এক সদস্যসহ আটজনের মৃত্যু হলো। বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জে গতকালও অবরোধকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। গতকাল বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
অবরোধ কর্মসূচির আগে থেকেই বিএনপির অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে। এর মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গ্রেফতার হয়েছেন।
এদিকে, অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ‘সর্বাত্মকভাবে’ পালনের জন্য দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর এই তিনদিন যে অবরোধ কর্মসূচি আছে তা সাফল করা জন্য আমি দেশবাসী ও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের এই কর্মসূচি সড়ক, রেল ও নৌপথে চলবে।’
রিজভী বলেন, ‘এটা হবে সর্বাত্মক অবরোধ। সর্বাত্মক বলতে আপনারা জানেন, যেমন রাজধানীর সঙ্গে জেলার পথগুলোতে সংযোগ রয়েছে, জেলার সঙ্গে উপজেলা বা উপজেলার সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের যে পথগুলোতে সংযোগ রয়েছে মেইন পথগুলোতে অবরোধ হবে, রেলপথগুলোতে অবরোধ হবে, নৌপথগুলোতে অবরোধ হবে।’
তবে সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবহনের গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সাতদিনে বিএনপির ৪ হাজার ২৮৩ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতা করা হয়েছে। মহাসমাবেশের দিন থেকে গত চারদিনে দলটির ৩ হাজার ৪৩৬ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত এবং একজন সাংবাদিকসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন।
অবরোধের আগে থেকেই বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের ফটকে পুলিশের ক্রাইম সিনের বেষ্টনী। তালাবদ্ধ কার্যালয়ের ভুতুড়ে পরিবেশ। একদিকে নেতাকর্মী শূন্য বিএনপি কার্যালয়, অন্যদিকে সেখানকার সড়কে যানবাহন চলছে হাতেগোনা। সব মিলিয়ে গোটা দেশের মতো নয়াপল্টন ও যেন তার চিরচেনা রূপ হারিয়েছে সরকারবিরোধী অবরোধ কর্মসূচিতে।
অনদিকে, বিগত দিনের চেয়ে চলমান কর্মসূচিতে ঢাকায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়ছে। ঢাকা মহানগর বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে মিছিল বিক্ষোভ পিকেটিং করছেন। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ছাড়া ঢাকায় সিনিয়র নেতাদের সেভাবে মাঠে দেখা যায়নি।
বিএনপির দায়িত্বশীলরা উন্মুক্ত ভিডিওবার্তার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উৎসাহ জোগাচ্ছেন এবং সতর্ক থেকে বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এবি