ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ৭৫ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিমে) ভর্তি করা হয়েছে। তবে বার্ন ইউনিউট বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না দগ্ধরা। এজন্য সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
শেবাচিম পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, সকাল থেকেই তিনি বিষয়টি মনিটরিং করছেন। লঞ্চের আগুনে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক সঙ্কটে তারা রোগীদের সবাইকে চিকিৎসা সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
দগ্ধ আলামিনকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন তার স্বজন জলিল উদ্দিন। তিনি বলেন, কোনো রকম মলম দিয়ে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকও নেই এখানে।
শেবাচিমের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের মধ্যে ক’জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দ্রুত পাঠানো হবে। আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুরা রয়েছেন। তাদের কারও কারও শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।
হাসপাতালের নার্স রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, বার্ন ইউনিটটি বন্ধ থাকায় রোগীদের সার্জারি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। সেখানে মেঝেতে সেবা নিচ্ছেন অনেকে। হঠাৎ রোগীর চাপ বাড়ায় কাউকে কাউকে রাখা হয়েছে সিঁড়িতে।
সিনিয়র স্টাফ নার্স মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দগ্ধ আট শিশুসহ ৭০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন।
২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের নিচতলায় আটটি শয্যা নিয়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ চালু হয়েছিল। বিভাগে আটজন চিকিৎসক ও ১৬ জন নার্সের পদ রাখা হয়। পরে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিটটি ৩০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। চালু থাকা পাঁচ বছরে পাঁচ হাজারেরও বেশি রোগী বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গত বছরের এপ্রিল মাসে হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এম এ আজাদের মৃত্যুর পর থেকেই অচল হয়ে পড়ে বার্ন ইউনিটটি। সর্বশেষ ওই বছরের ১৫ মে ইউনিটটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
এদিকে লঞ্চ অগ্নিকাণ্ডে আহত ১৫ জন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ জনে উন্নীত হয়েছে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, ক’জনের মৃতদেহ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে তাদের পরিচয় জানতে গেলে ফরেনসিক পরীক্ষার প্রয়োজন হবে। হতাহতের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করেনি প্রশাসন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দগ্ধ ৬৬ জনের মধ্যে ৪৫ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিমে) পাঠানো হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এআরকে