বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশি কর্মীদের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতিবছর কয়েকশো কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। শুধুমাত্র ভারতেই যাচ্ছে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার।তারা বলছেন, দক্ষ জনশক্তির অভাবেই বাংলাদেশ কোটি কোটি ডলার হারাচ্ছে।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ব্যবসায়ী নেতা ফজলুল হক বলছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি, গার্মেন্টস, ওষুধ কোম্পানি কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন অনেক বিদেশি নাগরিক। তিনি জানান, এসব কর্মীদের মধ্যে শীর্ষে আছে ভারত ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা। এর পরে পাকিস্তান, ফিলিপিন, কোরিয়া ও চীন থেকে আসা কর্মীরা।
এই তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “দেশে মিড লেভেল ও টপ লেভেলের প্রফেশনালদের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে আসা কর্মীরা চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে এসব কর্মী আমদানি করতে হচ্ছে।”
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি বলছে, তাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ২৪ শতাংশ তৈরি পোশাক কারখানাতে বিদেশী কর্মীরা কর্মরত আছেন।
দু’বছর আগে সিপিডির আরেক গবেষণার তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে যে রেমিটেন্স যায় তার মধ্যে শুধুমাত্র ভারতেই যায় ৫০০ কোটি ডলারের মতো, জানান সিপিডির গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি জানান, দক্ষতার ঘাটতির কারণেই বিদেশি কর্মীদের হাতে চলে যাচ্ছে দেশের অর্থ।
কিন্তু বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। কিন্তু তারপরও কেন বাইরের দেশের কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে?
এ প্রশ্নে ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, পেশাগত দক্ষতার অভাবের পাশাপাশি ভাষা-গত দক্ষতারও অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা এবং পেশাগত কৌশলের ঘাটতি রয়েছে।
“কারিগরি শিক্ষার অভাবটাই প্রকট। আমাদের এখানে ইউনিভার্সিটিগুলোতে যে ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে সেগুলো বেশিরভাগই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে ফোকাস করে দেয়া হচ্ছে না। তাদের ফোকাসটা অন্য জায়গায়। ফলে যেরকম গ্রাজুয়েট দরকার সেরকম আমরা পাচ্ছি না,” বলেন তিনি।
একদিকে দেশের ভেতরে বেকার এবং শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা যেখানে প্রকট সেখানে দেশ থেকে প্রবাসী অর্থ চলে যাওয়ার বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন।
তার মতে, “দেশের ভেতরে যারা গ্রাজুয়েট হচ্ছেন, তারাও উপযুক্ত মান সম্পন্ন নন। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে।
তিনি বলেন, “আপনি আশ্চর্য হবেন যে, এক-তৃতীয়াংশ বেকার দেখতে পাচ্ছি যারা গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন, অন্যদিকে দেশের ভেতরেই বিদেশিরা কাজ করছেন এবং দেশ থেকে অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে এমপ্লয়াররা প্রফেশনাল লোক খুঁজছেন, দেশের ভেতরে পাচ্ছে না। অন্যদিকে বিদেশি প্রফেশনালরা আমাদের এখানে কাজ করছেন, আমাদের জায়গাগুলো তাদের দিয়ে দিতে হচ্ছে, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”
গবেষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তৈরি পোশাকে যে উন্নতি হয়েছে তার বড় অংশই এসেছে দক্ষ শ্রমিকদের হাত ধরে। সেখানে ম্যানেজমেন্ট লেভেলে দক্ষতার ঘাটতির বিষয়টি থেকে গেছে উপেক্ষিত।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:বিবিসি বাংলা/বিকে