আগুন যেন পিছু ছাড়ছে না ইউরোপের। সেই গ্রীষ্ম থেকে আগুন তাড়া করে ফিরছে গোটা মহাদেশকে। কোথাও না কোথাও কখনও না কখনও লাগছেই আগুন। এবার দক্ষিণপশ্চিম ফ্রান্সে আগুন। সেখানে আগুন যেন এক দৈত্যাকার দাবানলের জেরে সামনে উপস্থিত। পরিস্থিতি খুবই সঙ্গিন হয়ে উঠেছে। পুড়ে যাচ্ছে বনের পর বন। ১০,০০০ মানুষকে ইতিমধ্যেই সরানো হয়েছে।
তাপমাত্রা প্রায় গা-পোড়ানো। জলবোমা ছুড়ে আগুনের সঙ্গে লড়ছেন আগুনকর্মীরা। আগুন মোকাবিলা হচ্ছে আকাশপথেও। কিন্তু আকাশপথে প্রতিরোধকাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে, কেননা ঘন ধোঁয়ার মেঘে ঢেকে গিয়েছে অগ্নিদাহ্য অঞ্চলের উপরের আকাশ-বাতাস। এক ফ্রান্সের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক অগ্নিনির্বাপণকর্মী গ্রেগরি অ্যালিওনি স্পষ্টতই উগরে দিয়েছেন কাজ করতে গিয়ে তাঁদের অসহায়তার কথা। বলেছেন– এই আগুন যেন এক ভয়ানক দৈত্য!
এই গ্রীষ্মের প্রথম থেকেই ইউরোপ জুড়ে দাবানলের বাড়াবাড়ি। দাবানলের জেরে হিটওয়েভ, আর তার জেরে নাজেহাল মানুষ। কোথাও কোথাও প্রাণসংশয়ের মতো পরিস্থিতি। সংশ্লিষ্ট দেশের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সন্ত্রস্ত। আবহাওয়াবিদেরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
দক্ষিণপশ্চিম ফ্রান্সের যে-অঞ্চলে আগুন লেগেছে তার আশপাশের গ্রাম ও বসবাসের এলাকার বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু মানুষকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। আগুনকে মূল বসবাসের এলাকা থেকে দূরে রাখার জন্য প্রভূত প্রচেষ্টা করা হয়েছে, তা সত্ত্বেও কোথাও কোথাও তার লেলিহান শিখা বাড়িঘরদোর বাগান-ক্ষেত ইত্যাদি গ্রাস করতে শুরু করেছে। ইউরোপিয়ান ফরেস্ট ফায়ার ইনফরমেশন সিস্টেম শোজ জানিয়েছে, এ বছরে ফ্রান্সে সব মিলিয়ে ৬০,০০০ হেক্টর জমি পুড়ে ছাই! সন্নিহিত এক অঞ্চলের মেয়র জাঁ-লুই ডার্টিয়ালহ জানিয়েছেন, আমরা একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছি, আমাদের মন ভেঙে গেছে। আমরা একেবারে অবসন্ন হয়ে পড়েছি!
বহুদিন ধরেই ইউরোপের আবহাওয়ার ধীরে ধীরে অবনতি ঘটছিল। গোটা ইউরোপের তাপপ্রবাহ ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। স্পেন, জার্মানি, ইংল্যান্ড, পর্তুগালে আগুনের হলকা বইছিল। যুক্তরাজ্যে এবারই প্রথম আবহাওয়ার রেড অ্যালার্ট ঘোষিত হল। তাপের জেরে নষ্ট হচ্ছে ভূ-সম্পত্তি, প্রাণিজ সম্পত্তি। যা সংশয়ে ফেলে দিয়েছে অর্থনীতিকেও।
ইউরোপের অনেক বাড়ি বা পথঘাটই পুরনো প্রযুক্তিতে তৈরি। এগুলি এই ভয়ানক তাপের সঙ্গে লড়তে পারছিল না। গলে যাচ্ছিল রাস্তাঘাট, বেঁকে যাচ্ছিল রেললাইন। ফ্রান্সের এই দৈত্যাকার আগুন আবার এই পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিল।
বাংলা৭১নিউজ/এবি