দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগামীকাল ১৯ আগস্ট থেকে স্বাস্থবিধি মেনে দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্র রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ কারণেই উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী খোলার সকল পুস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের দাবি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রায় ৭কোটি টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করে দর্শকদের জন্য সাজিয়ে তুলেছেন কেন্দ্রটি। স্বপ্নপুরীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ মো. দেলওয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বপ্নপূরী অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের শিবপুর মৌজায় স্বপ্নপূরীর কার্যক্রম শুরুহয়। বর্তমানে একশত পঞ্চাশ একর (৪৫০) বিঘা জমি নিয়ে বিশাল পর্যটন শিল্পটিতে কার্যক্রম চলছে। এর ভেতরে প্রায় ৮০০-এর মতো দোকানসহ বিভিন্নপেশার প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান। মালী, নিরাপত্তাকর্মী ও পরিচ্ছন্নকর্মী রয়েছেন ৫ শতাধিক। বর্তমানে সেই সকল শ্রমিকের বেতনসহ পরিবারের ব্যয়বহন করছে স্বপ্নপূরী পরিবার। বর্তমানে স্বপ্নপূরীতে প্রতিজন শ্রমিক সর্বনিম্ম ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা হারে মজুরি পরিশোধ করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৭কোটি টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে।
সরেজমিন সোমবার সকালে স্বপ্নপূরীতে গিয়ে দেখা যায়, সুবিশাল স্বপ্নপূরীতে রাস্তাগুলোতে নেই ঘোড়ার গাড়ির ঠনঠন শব্দ। রাস্তার পাশে মনোমুগ্ধকর ফুলগুলো সতেজ হয়ে ফুটেছে। পুকুর পাড়ে জলবিহারে মেতে ওটার জন্য স্পিড বোডগুলোতে নেই মানুষের কোলাহল। লেকের উপর ক্যাবল কারে মরচেপড়ার উপক্রম। বন্ধ রয়েছে দোকান। শান্ত কোলাহল মুক্তপরিবেশে সুনশান নিরবতা। পরির্চ্চার শ্রমিক ছাড়া ভেতরে কেউ নেই।
‘কর্মীরা কেওউ গাছের পাতার বর্ধিত অংশ কেটে ফুটিয়ে তুলছে সৌন্দর্য্য আবার কেউও গাছের ছোট অংশছেটে দিচ্ছেন। পুকুর পাড় ভাঙন রোধে তৈরি করা হচ্ছে গাড়ার দেয়াল। দর্শনার্থীদের জন্য দোকানগুলো পরিস্কার করা হচ্ছে। শুনশান নিরবতার মধ্য দিয়েই কর্মীরা স্বপ্নপুরীকে তার আপন মহিমায় ফেরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত থাকা মামুন নামে এক কর্মচারী মিষ্টি হাসি দিয়ে বলন, দীর্ঘ দেড় বছর ধরে স্বপ্নপুরী বন্ধ। তাই সব কিছু যেন তার আসল রূপ হারিয়েছে। দেখতে কেমন হয়ে গেছে। স্বপ্নপুরী খোলার সীদ্ধান্তে আমরাও সেই ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আবার সাজাছি তুলছি নতুন ভাবে, নতুন সাজে। খেলনা, রাস্তা ঘাট সব কিছুই যেন ভুতুরে হয়ে গিয়েছিল সব কিছু ধুয়ে আবার পরিস্কার করা হচ্ছে। ছিটানো হচ্ছে মশক নিধন ওষুধ।
বকুল গাছের বাড়তি পাতা বা ডাল কেটে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে করতে আমিরুল ইসলাম বলেন, ১৯ তারিখ থেকে চালু হওয়ার কথা। মালিক আমাদের নির্দেশ দিছে সবকিছু ঠিক ঠাক করতে, তাই বেশ কিছু লোক লাগিয়ে পরিক্ষার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যনেজার মো. মুক্তার হোসেন বলেন, স্বপ্নপূরী মূল সময় হলো ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। আবার দুই ঈদেও অনেক লোকের সমাগম হয়। করোনাভাইরাসের লকডাইনে কারণে প্রতিষ্ঠানটির ১৫ মাস ধরে বন্ধ। এতে প্রায় ৭ কোটি টাকা লোকশান হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার গাড়ি স্বপ্নপূরীতে প্রবেশ করে পিকনিক করার জন্য। সেই সময় এই এলাকার প্রায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।
জানতে চাইলে স্বপ্নপুরীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, এটাকে পর্যটন কেন্দ্র না বলে মানুষের কর্মক্ষেত্র বললে ভালো হয়। এটার উপর নির্ভর করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। স্বপ্নপুরীর উপর নির্ভর করে এর আশে পাশের সরাসরি ৪০০ মানুষ তাদের পরিবার চলে। এ ছাড়াও প্রায় ৫০০ মানুষ বিভিন্ন ভাবে এর সুফল ভোগ করে থাকেন। স্বপ্নপুরীর ভিতরে রয়েছে হরেক রকমের দোকান।
তিনি বলেন, ১৫ মাস বন্ধ থাকায় এসব পরিবারগুলো চলতে অনেক কষ্টে পড়ে গেছে। সরকার ১৯ তারিখ থেকে পর্যন্টন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। তারই ধারবাহিকতায় আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি। চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। আর যারা এখানে আসবে তাদেরকে বলতে চাই করোনা কিন্তু দেশে থেকে চলে যায়নি। আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক ব্যবহার করে আসবেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ