ফরিদপুর জেলা থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সেই লক্ষ্যে প্রতি বছর সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে পেয়াঁজ বীজ বিতরণ করা হয়। তবে এবারের প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে নিম্নমানের বীজ পেয়ে দিশেহারা তারা। বিষয়টির সত্যতাও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রবি মৌসুমের আওতায় ৫ হাজার ২০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-৪ ও ৬ জাতের পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি পেঁয়াজ বীজের সঙ্গে ২০ কেজি সারও বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে তাহেরপুরী জাতের ৪ হাজার ও বারি জাতের ১২শ কেজি বীজ বিতরণ করা হয়েছে। তবে এতে প্রণোদনা পাওয়া সব কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষকরা বলছেন, এসব বীজের ৫ শতাংশ বীজও অঙ্কুরিত হয়নি। এমনকি কোনো কোনো কৃষকের জমিতে অঙ্কুরিত বীজের হার ০ শতাংশ। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, ২০-৩০ শতাংশ বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে বলে সরেজমিনে প্রমাণ পেয়েছেন। যার হার মোটেও সন্তোষজনক নয়।
এদিকে বীজ বপনের সময় শেষ হওয়ায় হতশায় দিন কাটছে কৃষকদের।
এ বছর সালথা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাহেরপুরী জাতের এক কেজি বীজ পেয়েছেন মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদী গ্রামের কৃষক আহসান মোল্যা। তিনি দুই বিঘা (১০৫ শতাংশ) জমিতে পেঁয়াজ চাষ করবেন। এ লক্ষ্যে প্রণোদনার এক কেজিসহ আরও এক কেজি বীজ চড়া দামে ক্রয় করে বপন করেন। কিন্তু প্রণোদনায় পাওয়া বীজের অঙ্কুরিতের হার দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি।
শুধু তার নয়। ওই এলাকার কারও বীজ অঙ্কুরিত হয়নি বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।
আহসান মোল্যা বলেন, ‘আমি যে বীজ পেয়েছি তার কিছুই জ্বালায়নি (অঙ্কুরিত)। কয়েকদিন পরই হালি পেঁয়াজ লাগানো শুরু হবে। এখন নতুন করে বীজও পাওয়া যাচ্ছে না বা বুনানোর (বপন) সময়ও শেষ। আমি এখন কী করবো জানি না। এই পেঁয়াজ দিয়ে আমাদের সংসার চলে।
এ বছর পেঁয়াজ বীজের দাম আমার কেনার (ক্রয়ের) ক্ষমতার বাইরে থাকায় উপজেলা থেকে এক কেজি বীজ পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু তা কিছুই জ্বালায়নি। আমি এর ক্ষতিপূরণ এবং জড়িতদের বিচার চাই।’
একই কথা বলেন নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক নজরুল মিয়া। তিনি মাত্র এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যে প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি বীজ বপন করেন। কিন্তু তার জমিতে ৫ শতাংশ বীজও অঙ্কুরিত হয়নি বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন ক্ষতি করলো কেন। এখন কী দিয়ে চাষাবাদ করবো? আমাদের ক্ষতিপূরণ না দিলে সংসার নিয়ে বাঁইচ্যা থাকতে পারবো না।’
অপরদিকে কৃষকদের এমন ক্ষতির দায়ভার নিতে চাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তারা। তারা বিএডিসি কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন।
নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোষ বলেন, আমাদের কাজ শুধু বিতরণ করা। বীজ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার দায়িত্ব বিএডিসি (বীজ বিপণন) কর্মকর্তাদের। এজন্য তারাই দায়ী।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরেজমিনে গিয়ে সত্যতাও পেয়েছি। এবারের অঙ্কুরিতের হার সন্তোষজনক নয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও বিএডিসি কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে এবং সম্প্রতি ডিসি স্যারের সঙ্গে আমাদের জরুরি মিটিংও হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসির জেলা বীজ বিপণনের উপ-পরিচালক সৈয়দ কামরুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক ও জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, আমরা দেখেছি যে তাহেরপুরী জাতের বীজ ২০-২৫ শতাংশ এবং বারি জাতের বীজ ১৫-২০ শতাংশ অঙ্কুরিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জরুরি মিটিংও করা হয়েছে এবং খতিয়ে দেখার জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জানানো হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ