বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যাচ্ছে দেশের রফতানি খাত। বিশেষ করে প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি আদেশ বাতিল হচ্ছে প্রতি ঘণ্টায়। ইতোমধ্যে প্রায় ৩ কোটি ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।
বিদেশি ক্রেতারা ঘণ্টায় ঘণ্টায় ই-মেইল করে রফতানি আদেশ বাতিল, স্থগিত এবং নতুন রফতানি আদেশ না দেওয়ার কথা জানাচ্ছেন। ফলে চরম অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে পোশাক খাত, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পোশাক খাতের উদ্যোক্তা, শ্রমিক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ।
নারায়ণগঞ্জের এ ওয়ান পোলার নামে একটি কারখানার ১৫ মিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিলের কথা জানায় হল্যান্ডের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ। ই-মেইল করে প্রতিষ্ঠানটির মালিককে জানানো হয় রফতানি আদেশ বাতিলের বিষয়টি। এতে কারখানা মালিকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
কারণ রফতানি আদেশ অনুযায়ী পুরো পণ্য শিপমেন্টের জন্য প্রস্তুত। এ অবস্থায় আদেশ বাতিল করা মানে সংকটে পড়া। একই রকম অবস্থায় পড়েছেন বিকেএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি জানান, আমার পোল্যান্ডের এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দুদফার রফতানি আদেশ বাতিল করেছে। এর মধ্যে একটি আদেশ ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ডলারের। আরেকটি আদেশ ছিল ২ লাখ ডলারের। আজই এই রফতানি আদেশ বাতিলের মেইল পাই আমি। অথচ সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল পণ্য রফতানির জন্য।
তিনি জানান, এভাবে এখন প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় রফতানি আদেশ বাতিল বা স্থগিতের মেইল পাচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা। এভাবে যদি একের পর এক আদেশ বাতিল হয় তা হলে তো এই শিল্প একেবারে মুখ থুবড়ে পড়বে। এখন আমরা এ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে পড়েছি।
এ অবস্থায় আমরা সরকারকে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে ৬ মাসের জন্য সুদমুক্ত ঋণ চাচ্ছি সরকারের কাছ থেকে। আগের ঋণের সুদ মওকুফ চাচ্ছি এক বছরের জন্য। তা ছাড়া সম্প্রতি যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে সেটি স্থগিত করা হোক অন্তত এক বছরের জন্য।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কার্যালয় মঙ্গল ও বুধবার প্রতি ঘণ্টায় কারখানাগুলোর কাছ থেকে ক্রয়াদেশ বাতিলের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছে। অবশ্য কেবল বাতিল নয়, পাশাপাশি কারখানাগুলোর ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি ও কানাডায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গ্যাপ, নাইকি, ইন্ডিটেক্স, কলাম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার ও রিফরমেশনের মতো বিশ^খ্যাত ব্র্যান্ড ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন দেশে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের ২২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে দুটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। বিটপি গ্রুপের ৪ লাখ ৬৬ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে।
বাতিল ও স্থগিতাদেশের মধ্যে পড়েছে অ্যাপেক্স হোল্ডিংসের ৪০ লাখ পিস পোশাক। আমান গ্রাফিক্স অ্যান্ড ডিজাইনের ১ লাখ ১৩ হাজার ডলার মূল্যের ৩৯ হাজার পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে।
আমান নিটিংয়ের ১ লাখ ৯৭ হাজার ডলারের ৪৪ হাজার ৭২৬ পিসের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে। স্কাইলাইন গার্মেন্টসের ৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। রুমানা ফ্যাশনের ৯০ হাজার পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে দুই ক্রেতা।
করোনাভাইরাসের প্রভাব দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজার ও পর্যটনসহ বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় সব খাতে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) মার্চের প্রথম সপ্তাহে বলেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিরাট ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্ব।
বৈশ্বিক উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। বৈশ্বিক জিডিপি এ বছর শূন্য দশমিক ১ থেকে দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। আর আর্থিক ক্ষতি হতে পারে ৩৪ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) বলেছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মহামারী অবস্থায় গেলে এক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৯ লাখ কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ক্ষতি হতে পারে ৩০২ কোটি ডলার।
আর এতে বাংলাদেশে এক বছরে জিডিপির ক্ষতি হতে পারে ১ শতাংশেরও বেশি। আর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবাখাত। এর পরিমাণ হতে পারে ১১৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ।
এ ছাড়া কৃষিখাতে ৬৩ কোটি ডলার, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও এ সংক্রান্ত সেবা খাতে প্রায় ৫১ কোটি ডলার, উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে প্রায় ৪০ কোটি ডলার এবং পরিবহন খাতে ক্ষতি হতে পারে সাড়ে ৩৩ কোটি ডলার।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস