পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পাবনার কৃষি প্রধান গাজনার বিলের ৮ গ্রামের চাষাবাদ। অসময়ের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চলতি মৌসুমে এসব গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা জমিতে চাষ হয়নি মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এতে এখনো পূরণ হয়নি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা। অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে চারা পেঁয়াজ ও শীতকালীন সবজি নিয়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের ঘোড়ারভিটা, চরদুলাই, রাইশিমুল, চরগোবিন্দপুর, শারীর ভিটা, বনকোলা, উলাট, আলাদী, দুর্গাপুরসহ অন্তত আট গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা জমি এখনো অনাবাদী।
গত বছরও এ সময়ে জমিতে ছিল সবুজ পেঁয়াজ পাতার সমারোহ। কিন্তু এ বছর ঠিক সেখানেই ভরপুর পানি, কচুরিপানা ও আগাছায় আচ্ছাদিত। যা পরিষ্কার করে জমি প্রস্তুত করা বাড়তি ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ। ফলে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে অনাবাদী এসব সুফলা জমিতে সবজি ও রবিশস্য আবাদ নিয়েও দুশ্চিন্তায় কৃষকরা।
ভুক্তভোগী চাষিদের অভিযোগ, অব্যবস্থাপনায় বিলের মাঝে মাছ চাষে প্রভাবশালীদের অপরিকল্পিত পুকুর খনন-নিষ্কাশন চ্যানেলের পাড় কেটে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টিই এ জলাবদ্ধতার জন্য সবচেয়ে বড় দায়ী। এর ফলে জমি আটকে আছে কচুরিপানা ও আগাছায়।
এ বিষয়ে শারীর ভিটা গ্রামের কৃষক বোরহান আলী বলেন, এসময়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ নিয়ে আমাদের প্রত্যাশার কথা জানানোর কথা। অথচ এখনো জমিতে পানি না নামা ও কচুরিপানা আটকে থাকায় দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে। এ জমি প্রস্তুত করতে আরও সপ্তাহ তিনেকের বেশি সময় লেগে যাবে। দ্রুতই পানি নামানো না গেলে চাষাবাদের কি অবস্থা হবে কে জানে।
আলাদীপুর গ্রামের কৃষক সাত্তার মালিথা বলেন, এমনিতেই সার কীটনাশকসহ আবাদের জন্য দরকারি সবকিছুর দাম বেশি। এরমধ্যে এই কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
সাধারণ সময় ৫টা শ্রমিক দরকার হলে এখন আরও ৫-৭ জন শ্রমিক বেশি লেগে যাচ্ছে। একেকটা শ্রমিকের বিল ৭০০ টাকা। অন্যান্য খরচ তো আছেই। নিয়ম না মেনে পুকুর খনন করে ও নালার পাড় কাটে প্রভাবশালীরা। এজন্য আমাদের এমন দুর্ভোগ। মুড়িকাটা পেঁয়াজ তো আবাদ করতেই পারিনি, হালি বা চারা পেঁয়াজ করতে পারবো কি না এখন সে চিন্তায় আছি।
গাজনার বিলের এই অংশে ৭ বিঘা জমি রয়েছে চরগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক হেলাল মণ্ডলের। সঠিক সময়ে পানি না নামায় তার পুরো জমি কচুরিপানা ও আগাছায় আচ্ছাদিত। লোন নিয়ে প্রতিবছর পেঁয়াজ ও অন্যান্য সবজি আবাদ করেন তিনি।
হেলাল মণ্ডল বলেন, যে টাকায় পেঁয়াজ আবাদের ব্যয় মেটানোর কথা, এবার সে টাকায় আগাছা পরিষ্কার করতে হচ্ছে। কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কারে প্রতি বিঘা জমিতে ১০-১৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
তবুও জমি আবাদে আসা সম্ভব হচ্ছে না। আরও দুই-তিন সপ্তাহ সময় লেগে যাবে। অথচ এসময় পেঁয়াজে মাঠ ভরে যাওয়ার কথা। খরচ বেড়ে যাচ্ছে, এদিকে দেরিতে আবাদ করায় সঠিক দাম মিলবে না। সব মিলিয়ে আমাদের সেই পোড়া কপালই রয়ে যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, জলাবদ্ধতায় অনাবাদী থাকায় পাবনায় চলতি মৌসুমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এবছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর। এর বিপরীতে এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৪৫৬ হেক্টর জমি।
এখন ঘাটতি থাকলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হবে জানিয়ে পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জামাল উদদীন বলেন, প্রতিবছরই এ জমিগুলো থেকে পানি দেরিতে নামে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
চলতি মাসের মধ্যেই পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কচুরিপানা সরাতে কৃষকদের কিছুটা ব্যয় বাড়লেও এ থেকে জমিতে যে সার উৎপাদন হবে, তাতে কৃষকদের ব্যয় মিটে যাবে এবং উৎপাদন ভালো হবে। এছাড়া জলাবদ্ধতার জন্য দায়ীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।
প্রতি বছর পাবনায় অক্টোবরের শুরুর দিকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু হয়। তবে এবার অতিবৃষ্টির ফলে তা রোপণে দেরি হওয়ায় এ পেঁয়াজ বাজারে আসতেও দেরি হবে। সাধারণত নভেম্বরের শেষের দিকে এ পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করলেও এবার তার দেখা মিলছে না।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শেষের দিকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। কয়েকদিন আগেও পেঁয়াজের উচ্চমূল্য থাকলেও বর্তমান পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর দাম মণ প্রতি (৪০ কেজি) হাজার টাকা করে কমেছে।
এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি কৃষকের পেঁয়াজ বাজারে আসার সময় হলেও দরপতন হয়। এতে লোকসানে পড়েন তারা। তাই নতুন এ সরকারের কাছে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য বেধে দেওয়ার দাবি তাদের।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম