এক বছর, দু’বছর বা ১০০ বছর নয়, প্রায় ৫০ হাজার বছর পর ফের দেখা দিয়েছে ‘অ্যা রেয়ার গ্রিন কমেট’ নামের এক বিরল ধূমকেতু। সম্প্রতি লাদাখের আকাশে এর দেখা মিলেছে। অ্যাস্ট্রোফোটোগ্রাফারেরা ইতোমধ্যেই ধূমকেতুটির সুন্দর ও আকর্ষণীয় কিছু ছবিও তুলেছেন। যা বেশ রোমাঞ্চকর।
শেষবার যখন পৃথিবীর আকাশে এ সবুজ রঙের ধূমকেতুটি ফুটে উঠেছিল তখন এই গ্রহে রাজত্ব করতো নিয়ান্ডারথাল মানুষেরা। প্রাগৈতিহাসিক সেই যুগের পর আবারও ফিরে এসেছে সেই মহাজাগতিক আলোকপিণ্ডটি। যার পোশাকি নাম সি/২০২২ ই৩ (জেডটিএফ)। গত বছরের মার্চে বৃহস্পতির কক্ষপথে তাকে খুঁজে পেয়েছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবী ও মঙ্গলের কক্ষপথের মাঝে ঘণ্টায় প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার কিলোমিটার বেগে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবুজ রঙের এই ধূমকেতুটি। এর নিউক্লিয়াসের আয়তন ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার, আর এর লেজটি সুদীর্ঘ। কয়েকলাখ কিলোমিটার দীর্ঘ। ধূমকেতুটি যত সামনে আসবে তত উজ্জ্বল লাগবে। দিগন্ত তত সুন্দর অপরূপ লাগবে।
ধূমকেতুর শরীরে থাকে বরফের আচ্ছাদন। ভিতরে থাকে অন্ধকার জৈব উপদান। সৌরজগতের গঠন সম্পর্কে বিশদে জানতে ধূমকেতুর উপর নির্ভর করেন বিজ্ঞানীরা। তাই প্রতিটি নতুন ধূমকেতুকে (Comet) নিরীক্ষণ করেন তাঁরা। স্বাভাবিক ভাবেই সবজেটে এই ধূমকেতুকে ঘিরে আগ্রহের শেষ নেই সাধারণ ভাবেই।
উল্লেখ্য, এটি সূর্যের যত কাছে এগোচ্ছে, ততই গলে যাচ্ছে তার বরফের লেজ।
বিজ্ঞানীরা জানান, লাদাখে অবস্থিত হিমালয়ান চন্দ্র টেলিস্কোপ তুলে ফেলেছে এই নব আবিষ্কৃত ধূমকেতুর ছবি। টেলিস্কোপে তার চলন খতিয়ে দেখে বোঝা গিয়েছে গড়পড়তা ধূমকেতুর তুলনায় এটি বেশ দ্রুতগামী।
কেমন গঠন এই ধূমকেতুটির? সে উত্তরে জানা যাচ্ছে, এর লেজের সংখ্যা দুই। যা তৈরি হয়েছে মূলত গ্যাস ও ধুলো দিয়ে। ধূমকেতুটি আমাদের সৌরজগতের একেবারে শেষ প্রান্তেই সবচেয়ে বেশি সময় কাটায়। বিভিন্ন শিলা এবং বরফের যে পরিমণ্ডল আমাদের সৌরমণ্ডলকে ঘিরে রেখেছে, তার মধ্যেই অবস্থান তার। সেখানে অন্য নক্ষত্র এমনকি আকাশগঙ্গার অভিকর্ষ শক্তি সূর্যের চেয়েও ঢের বেশি। তার জেরে কখনও কখনও মহাজাগতিক বস্তু সমূহ ছিটকে বেরিয়ে আসে। সে ভাবেই ফের পৃথিবীর আকাশে দেখা মিলতে চলেছে এ ধূমকেতুর।
এবার দূরে চলে গেলে ফের কি ৫০ হাজার বছর পরে আবারও ফিরবে সি/২০২২ ই৩? জেসিকা লি নামের এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এ বিষয়ে জানান, “আমাদের কাছে এমন হিসেব নেই যে এবার পৃথিবী পেরিয়ে গিয়ে কত দূর চলে যাবে ধূমকেতুটি। তবে এটা বলতেই পারে, আবারও যদি এটা ফিরে আসে সেটা অন্তত ৫০ হাজার বছরের আগে হবে না।”
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি খালি চোখেও দেখা যাবে। তবে টেলিস্কোপেই ভাল দেখা যাবে। খালি চোখে দেখা গেলেও ততটা উজ্জ্বল ভাবে যাবে না। একটু খেয়াল করলেই আকাশে ওই সবুজ ধূমকেতুকে দেখা যাবে। তবে ধীরে ধীরে কমে যাবে উজ্জ্বলতা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ