আগস্টের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত দুর্যোগকালেও সুন্দরবনে প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে পর্যটক। পদ্মা সেতুর কল্যাণে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় পর্যটকরা খুব সহজেই তাদের পছন্দের জায়গায় যেতে পারছে কম সময়ে। ফলে ভ্রমণের জন্য ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পে।
সূত্রে জানা গেছে, আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল এবং হারবাড়িয়া ট্যুরিস্ট স্পটে।
দুর্যোগ উপেক্ষা করে এই দেড় মাসে শুধু করমজলেই এসেছে পাঁচ সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটক। যেখানে গত বছর এর অর্ধেক পর্যটকেরও দেখা মেলেনি। রাজস্ব আয়ও হয়েছে বেশি।
অন্যদিকে খুলনা ও মোংলার একাধিক ট্যুর অপারেটর জানান, তাঁদের ট্যুর কম্পানিগুলোতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসজুড়ে বুকিং ফিলাপ হয়ে গেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্তও বেশির ভাগ কম্পানির আগাম বুকিং হয়ে গেছে। বিগত দু-তিন বছরে এমন সময় বুকিং তো দূরের কথা, নিজেদের টিকে থাকাই দুরূহ হয়ে পড়ে।
মোংলা সমুদ্রবন্দর ট্যুরিজম কম্পানি আরাল সি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার প্রভাব বিস্তারের পর থেকে লোকসানে পড়ে সুন্দরবন ট্যুর কম্পানিগুলো। এ সময় পর্যটকের অভাবে আয় কমে প্রায় পথে বসে গিয়েছিল। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আমরা ট্যুর অপারেটররা নতুন করে আশার আলো দেখছি। ’
এই ট্যুর অপারেটর আরো বলেন, এখন পদ্মা সেতু পার হয়ে করমজল, হারবাড়িয়া, আলীবান্দাসহ সুন্দরবনের কাছাকাছি দর্শনীয় স্থানগুলো দিনে ভ্রমণ করে তারা রাতেই ফিরতে পারছে। সেতুর কল্যাণে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় অফ সিজনেও ডে ট্যুরের পর্যটকদের আগমন বেশি ঘটেছে এ বছর।
মোংলার একে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের নির্বাহী পরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘মোংলায় ডে ট্যুরের জন্য তিন শতাধিক ছোট বোট এবং প্যাকেজ ট্যুরের জন্য ৯টি লঞ্চ রয়েছে। তিন বছর ধরে ট্যুর অপারেটরসহ এসব বোট ও লঞ্চে কর্মরত শত শত শ্রমিক চরম আর্থিক সংকটে পড়েন।
পদ্মা সেতু হওয়ায় এবার পর্যটকদের যে আগ্রহ দেখছি, তাতে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব আমরা। চলতি মাসে (সেপ্টেম্বর) দুর্যোগের মধ্যেও করমজল ও হারবাড়িয়ায় গত বছরের চেয়ে আমরা দ্বিগুণ ট্যুর করেছি। খুলনা ও মোংলা থেকে পর্যটকবাহী ১৫টি বড় লঞ্চ ভিড়েছে। গতবার যা ছিল শূন্যের কোঠায়। ’
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) খুলনার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কচি জমাদ্দার এবং মেহেদী ট্যুরিজমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহেদী ইসলাম রকি বলেন, খুলনায় যৌথ ও একক মালিকানাধীন ৯০টি ট্যুর কম্পানি রয়েছে। এসব কম্পানির অধীনে রয়েছে ২২টি ট্যুরিস্ট জাহাজ। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা ও কটিখালীতে ভ্রমণের জন্য সব জাহাজেই আগাম বুকিং হয়ে গেছে। কোনো বুকিং ফাঁকা নেই।
মোংলার করমজল ট্যুরিস্ট জোন ও বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, এবার দুর্যোগ উপেক্ষা করেও পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করছে।
সুন্দরবন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষণ (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, পদ্মা সেতু সুন্দরবন ট্যুরিজমে ইতিবাচক সাড়া ফেলতে শুরু করেছে। শীত মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পর্যটকদের আগমন বেশি হবে সুন্দরবনে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ