বাংলা৭১নিউজ,(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: প্রায় ২শ’ একর বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে পদ্মফুলের সমারোহ। পানির ওপর আসন পেতে থাকা এসব হাজারো পদ্মের নয়নাভিরাম দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। একদিকে প্রতিটি পদ্ম পাতার উপরে মুক্তার মত টলমল করা পানি আর বিল থেকে খাবার আহরণের জন্য দল বেঁধে আসা শালিকের কিচির মিচিরে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রকৃতি।
বিলজুড়ে পদ্মফুলের এমন অপরূপ সৌন্দর্য দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রকৃতি প্রেমিদের মনকে যেন নাড়া দেয়। তাই সৌন্দর্য পিপাষুদের এখন নতুন ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ঘাগুটিয়া-মিনারকুট পদ্মবিল। তাদের দাবি দর্শনীয় এই স্থানটির স্বার্থে সড়ক সংস্কারসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিলের সৌন্দর্যকে এ জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসাবে গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে আখাউড়া উপজেলার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ঘাগুটিয়া-মিনারকোট পদ্মবিল সেজেছে শরতের অপরূপ সাজে। ঝাকেঁ ঝাঁকে পদ্মের সমাহার মন কেড়ে নিচ্ছে প্রকৃতি প্রেমীদের।
রাতের আঁধার কেটে সূর্য উকি দেয়ার সাথে সাথেই হেসে উঠে পদ্ম। ভোর হলেই কলি ভেদ করে সাদা-গোলাপী রংয়ের মিশ্রণে পাপড়ি মেলে জানান দেয় নিজের সৌন্দর্যের। যার মাত্রা আরও বেড়ে যায় যখন পাখিরা দল বেঁধে বিল থেকে খাবার সংগ্রহ করে। পাখির কিচির-মিচিরে প্রকৃতি যেন তার পেখম মেলে ধরে। প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও এই পদ্মবিল দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা সেখানে ছুঁটে আসে।
সরেজমিনে বিলে গিয়ে দেখা মেলে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে পুরো বিল ঘুরে পদ্মফুলের সৌন্দর্য দিয়ে নিজেদের মনকে প্রশান্ত করছে। কেউবা আবার সেলফি নিয়ে ব্যস্ত। প্রকৃতি যেন এখানে সেজেছে বর্ণিল সাজে। তবে পদ্মবিলে যাবার পথে কর্নেল বাজার থেকে ঘাগুটিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক সরু এবং অসংখ্য খানাখন্দ থাকায় যান চলাচলেও দুর্ভোগ বাড়ছে দর্শনার্থীদের।
বিলে ঘুরতে আসা কলেজছাত্র নাসিম হোসেন বলেন, ‘ঘাটুটিয়া পদ্মবিলের নাম শুনেছি। সরেজমিনে এসে দেখি খুবই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। আমরা তিন বন্ধু মিলে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে পুরো বিল ঘুরে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি। তবে যাত্রাপথে কর্নেল বাজার থেকে ঘাটুটিয়া পর্যন্ত সড়কে খানাখন্দ থাকায় এবং সড়কটি সরু হওয়াই যান চলাচলে কিছুটা সমস্যা হয়। সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত করা হলে দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধা হবে।’
কলেজছাত্রী শামীমা ইয়াছমিন বলেন, ‘এটা পদ্মবিল। এর চারপাশে গাছপালা রয়েছে। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে সবাই আসতে পারে। পাশে বিজিবি ক্যাম্প থাকায় নিরাপত্তাও আছে।’
ঢাকা শহর থেকে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা সাংবাদিক ও লেখক শাহ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, ‘অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এই পদ্মবিলে না এলে বুঝতে পারতাম না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেকটি রূপের বিষয়। এখানকার মানুষের প্রকৃতি সংরক্ষণের যে তাগিদ তা সত্যিই আকৃষ্ট করে সবাইকে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে পদ্মবিল বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।’
তবে অনেকটা আপেক্ষের কণ্ঠে স্থানীয়রা বলেন, ‘বিল সংরক্ষণে স্থানীয়ভাবে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অনেক দর্শনার্থী বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে ফুল ছিঁড়ে ফেলে। এতে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা তাদের প্রতি আহ্বান জানাই বিলের সৌন্দর্য রক্ষার্থে ফুল না ছিঁড়তে।’
কথা হয় মিনারকোট গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের পশ্চিম পাশে পদ্মবিল। কয়েক যুগ ধরে এই বিলে পদ্মফুল ফুটছে। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে প্রতিনিয়ত।’
স্থানীয় বাসিন্দা শিপন মিয়া বলেন, ‘আগে মানুষ তেমন বেশি একটা আসত না। চার/পাঁচ বছর ধরে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। ফুলগুলো যখন পানিতে ভেসে থাকে তখন এর সৌন্দর্যটা বেশি থাকে। তবে বেশিরভাগ দর্শনার্থীই ফুল ছিঁড়ে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট করে।’
ডিঙ্গি নৌকার মাঝি জয়নাল মিয়া বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে তেমন কোনো কাজকর্ম থাকে না। ছোট নৌকা নিয়ে বিলের পাড়ে বসে থাকি। বিভিন্ন লোকজন নৌকায় চড়ে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করে। এতে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা রোজগার হয়। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে পারি ‘
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মে. রইস উদ্দিন বলেন, ‘পদ্ম বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাতে দর্শনার্থীরা নিরিবিলি এবং নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারে তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
আর জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন বলেন, ‘এ বিলকে জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন স্পষ্ট হিসেবে গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র বিলের সৌন্দর্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি