বাংলা৭১নিউজ,(বরিশাল)প্রতিনিধি: বরিশালের হিজলা উপজেলায় এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পর মুখে মলমুত্র ঢেলে দেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সোমবার মলমূত্র ঢালার ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছাড়া হয়। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, যুবকটির পেছন থেকে হাত-পা বেঁধে বুকের ওপর পা দিয়ে জোর করে মলমুত্র খাওয়ানো হচ্ছে। যুবকটি অনেক চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাননি।হিজলার হরিনাথপুর তালতলা জামে মসজিদ রোড নামক স্থানে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
যা নিয়ে গত কদিন ধরেই পুরো হিজলা উপজেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা ইতিপূর্বে জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।নির্যাতনের শিকার ওই যুবকের পরিচয় খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, তিনি হিজলা উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নের হরিণাথপুর বাজারসংলগ্ন টমুচরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন বেপারির ছেলে আজম বেপারি (২৫)। সে হরিণাথপুর লঞ্চঘাটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী।
এ ছাড়া তাকে যারা নির্যাতন করেছে, তাদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি হলেন একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেক সিকদারের ছেলে ও হরিণাথপুর লঞ্চঘাটের সুপারভাইজার মাহবুব সিকদার। সে স্থানীয় এমপি পঙ্কজনাথের লোক হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বেই যুবককে নির্যাতন ও মলমুত্র খাওয়ানোর ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
তা ছাড়া ঘটনার পর থেকেই আজম বেপারি নামে ওই যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও তার পরিবারের দাবি, আজম ঘটনার পর তাবলিগ জামায়াতে গেছে। তবে এ বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি তার পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ‘আজম বেপারিকে হাত-পা বেঁধে হেরিংবনের রাস্তার ওপর ফেলে রাখা হয়েছে। তার চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ৭-৮ জন লোক। এর মধ্যে একজন আজমের বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া অপর একজন লোক আজমের পা এবং একজন লোক তার মাথা মাটির সঙ্গে চেপে ধরে আছে।
একটু পরেই বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি বিশেষ পাত্রে মলমুত্র নিয়ে তা জোর করে আজমের মুখে ঢালার চেষ্টা করছেন। তখন আজম অনেক অনুনয়-বিনয় এবং ধস্তাধস্তি করেও তাদের থেকে রক্ষা পায়নি।
এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে কিছু লোক ওই ঘটনা উপভোগ করলেও কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে আসেননি। আর পুরো ঘটনাটি পাশ থেকে দাঁড়িয়ে কেউ একজন মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ‘ঝাকফুকের কাজ করে বলে অপবাদ দিয়ে আজম নামে ওই তেল ব্যবসায়ী যুবককে এমন মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেন মাহবুব ও তার লোকজন।
এমনকি ঘটনার পর ওই যুবক লোকলজ্জায় মোবাইল ফোন বন্ধ করে তাবলিগ জামায়াতে চলে যান। তবে তিনি কোথায় আছেন সে সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
এদিকে খবর পেয়ে হিজলার হরিণাথপুর শাওড়া সৈয়দখালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক তারেক আহসান রাসেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি ঘটনাটি এড়িয়ে যান।
তবে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক তারেক আহসান রাসেল এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।
পরে অবশ্য বলেন, ‘আমি রাতেই (সোমবার) ঘটনাটি শুনেছি। তবে ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি আমার জানা নেই। সেটি এখনও আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। মঙ্গলবার এ বিষয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ঘটনা আমি শুনেছি। রাতেই স্থানীয়দের মাধ্যমে এ বিষয়ে আমার কাছে খবর আসে। তবে এখন পর্যন্ত ভিডিওটি দেখিনি। থানা পুলিশকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/কেএইচ