বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: যেসব শান্তিরক্ষী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্যাতন করে অথবা তাদেরকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয় তাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয় এ জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ ছাড়া শান্তিরক্ষী মিশনে বার্ষিক বরাদ্দ কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে শান্তিরক্ষী মিশনের সবচেয়ে বড় অংশীদার বাংলাদেশ সতর্কতা দিয়েছে।
বলা হয়েছে, বাজেট কর্তন করা হলে শান্তিরক্ষী মিশন বিঘ্নিত হবে। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বুধবার নিরাপত্তাপ পরিষদে শান্তিরক্ষী ইস্যুতে এক বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডয়েচে ভেলে। এক্ষেত্রে যেসব শান্তিরক্ষী বেসামরিক নাগরিকদের নির্যাতন বা তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবেন তাদের বিরুদ্ধে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যদি তারা অসদাচার বা ব্যাভিচারে লিপ্ত হন তাহলে এমন শান্তিরক্ষীতে তার দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে হবে।
তাকে পরিবর্তন করতে হবে। এমন কি তাকে কোনো অর্থ দেয়া হবে না। খসড়া প্রস্তাবে আরো যেসব পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে ‘পারফরমেন্স ফেইলর’ বা কাজে ব্যর্থতার রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। পারফরমেন্সে ব্যর্থতার জন্য কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার জবাবদিহিতা থাকতে হবে। দৃঢ় পারফরমেন্স যারা দেখাবেন তাদের জন্য শক্তিশালী প্রণোদনার সুপারিশ করা হয়েছে।
নিকি হ্যালি বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ায় ব্যর্থতার চেয়ে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। এমন ক্ষেত্রে ওইসব বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা করছেন শান্তিরক্ষীরা। তাদের ওপর নির্যাতন করছেন। শোষণ করা হচ্ছে। আর এটা করছেন সেইসব শান্তিরক্ষী, তাদেরকে যাদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা। তাই শান্তিরক্ষীতের পারফরমেন্স উন্নত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে ওই খসড়া প্রস্তাব দিচ্ছে।
ডয়েচে ভেলে লিখেছে, ভয়াবহ সহিংসতা মোকাবিলা করছে এমন এলাকাগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও তাদেরকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যর্থতায় ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে এমন ঘটনা মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও দক্ষিণ সুদানে ঘটছে।
বিশ্বজুড়ে ১৪টি মিশনে জাতিসংঘ মোতায়েন করেছে ৯৬ হাজার শান্তিরক্ষী। এসব মিশনের বার্ষিক বাজেট ৬৯০ কোটি ডলার কর্তনের কথা বলেছে।
উল্লেখ্য, এই বাজেটের চার ভাগের এক ভাগই দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবের প্রতি নীরব সম্মতি দিয়েছে রাশিয়া ও চীন।
তারা বলেছে, যেসব দেশ শান্তিরক্ষী দিচ্ছে তাদেরকেও ধর্তব্যের মধ্যে আনা উচিত। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেছে, ‘মাইক্রো-ম্যানেজমেন্টে’ জড়িত হওয়া উচিত নয় নিরাপত্তা পরিষদের। রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে শান্তিরক্ষী মিশনের সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট থাকা উচিত। তিনি মনে করেন, শান্তিরক্ষী মিশনে সেনা দিয়ে অবদান রাখা দেশগুলোকে শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে, বাধ্যতামুলক একটি প্রস্তাবের পরিবর্তে, রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় পারফরমেন্স উন্নত হতে সহায়ক হবে।
শান্তিরক্ষী মিশনে সবচেয়ে বেশি সেনা প্রদানের দিক দিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। এ দেশটি পয়েন্ট আউট করে বলেছে, শান্তিরক্ষী মিশনের পর্যাপ্ত উৎস ও জনবল আছে। তাই পারফরমেন্স এই মিশনের সঙ্গে ‘ওতপ্রোতভাবে জড়িত’। বলা হয়েছে, পরফরমেন্স ব্যর্থতার অভিযোগকে ব্যবহার করে যদি খরচ কর্তন করা হয়, জনবল কমানো হয় তাহলে তাতে হয়তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে। কিন্তু শান্তিরক্ষী মিশনগুলো যে দায়িত্বের জন্য ম্যান্ডেট পাওয়া তা অর্জন কঠিন হবে।
এরই মধ্যে শান্তিরক্ষী মিশনে নিয়োজিত ব্লু হেলমেট পরিহিতদের অসদুপায় অবলম্বনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। এর মধ্যে যৌন সহিংসতায় নির্যাতিতদের সহায়তা করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেড এইচ