প্রায় ২৫ বছর আগে ঢাকার সদরঘাট থেকে নিখোঁজ হন জাহানারা বেগম। এরপর থেকে বহু জায়গায় খুঁজেও তার কোনো সন্ধান পাননি স্বজনরা। দীর্ঘ এত বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে তাকে খুঁজে পান তার সন্তানরা।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজার এলাকা থেকে তাকে নিয়ে যান তার স্বজনরা।
জানা যায়, জাহানারা বেগমের বর্তমান বয়স ৬০ বছর। ঠিকভাবে কথাও বলতে পারেন না। গত ১৫-২০ দিন যাবত তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপনের দোকানের সামনে ঘোরাফেরা করতেন। এরপর আশরাফুল আলম রিপন তার বাড়িতে জাহানারা বেগমকে নিয়ে তার পরিচয় জানার চেষ্টা করেন।
কিন্তু বুঝা যাচ্ছিল তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাই অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন। শুধু ‘বরগুনা ও ঘটবাড়িয়া’ শব্দ দুটি বোঝা যাচ্ছিল। তাই সেসব লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়। এরপরই বরগুনা থেকে তার স্বজনেরা যোগাযোগ করেন।
জাঙ্গালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপন বলেন, ১৫-২০ দিন ধরে জাহানারা বেগম আমার দোকানের সামনেই ঘোরাফেরা ও বসে থাকতেন। গত পাঁচ-ছয় দিন ধরে তিনি আমার বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া করেছেন। আমি তার সাথে কথা বলে পরিচয় জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ‘বরগুনা ও ঘটবাড়িয়া’ শব্দ দুটিই বুঝতে পেরেছিলাম।
তারপর ঢাকায় আমার ছেলে শাহরিয়ার হৃদয়কে বিষয়টি জানাই। তখন হৃদয় বরগুনায় তার পরিচিত একজনকে জাহানারা বেগমের কথা জানান এবং তার কয়েকটি ছবি পাঠায়। এরপর সেই ব্যক্তি ফেসবুকে জাহানারার ছবিসহ পোস্ট দেন। এরপরই বরগুনা থেকে তার স্বজনরা আমার সাথে যোগাযোগ করেন। শুক্রবার দুপুরে তার পরিবারের কাছে জাহানারাকে তুলে দেওয়া হয়। এত বছর পর জাহানারা বেগম তার পরিবার খুঁজে পাওয়ায় আমরাও আনন্দিত।
জাহানারা বেগমের স্বজনরা জানান, বরগুনা সদরের ঘটবাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফ ফরায়েজীর স্ত্রী জাহানারা বেগম (৬০)। ১৯৯৯ সালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। প্রায় ২৫ বছর আগে জাহানারা বেগম তার তিন বছরের ছোট ছেলে ছায়দুলকে নিয়ে বরগুনা থেকে ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় রওনা হন।
ভোরে সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে তিনি ছেলেকে রেখে টয়লেটে যান। সেখান থেকেই মা ও ছেলে নিখোঁজ হন। এরপর তাদের বহু জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে আর পাওয়া যায়নি। ১০ বছর আগে ছায়দুলের সন্ধান পেলেও জাহানারা বেগম নিখোঁজই ছিলেন। জাহানারা ও লতিফ ফরায়েজীর পরিবারে পাঁচ সন্তান।
দীর্ঘদিন পর মাকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহানারা বেগমের ছোট মেয়ে হাসি বেগম। তিনি আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বলেন, মা যখন নিখোঁজ হয়, তখন আমার বয়স পাঁচ বছরের মতো। মাকে খুঁজে পেয়ে যেন পৃথিবী হাতে পেয়েছি। আমাদের ছোট রেখেই হারিয়ে যান মা। এখন আমরা সংসার করছি। ধরেই নিয়েছিলাম মায়ের মুখ আর কখনো দেখতে পারব না। এত বছর পর খুঁজে পাওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
শুক্রবার দুপুরে জাহানারা বেগমকে তার পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুল ইসলাম, শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবুল কালামসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে