৬৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন কবি, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও ছড়াকার কবি আসাদ বিন হাফিজ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সোমবার (১ জুলাই) সকালে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কবির ভাতিজা নেছার উদ্দিন মাসুদ। রোববার (৩০ জুন) দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
নেছার উদ্দিন মাসুদ বলেন, আসাদ বিন হাফিজ দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। গেলো ২৯ জুন রাতে তার অবস্থা খারাপ হলে জরুরিভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন রোববার (৩০ জুন) দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে তিনি মারা যান।
সোমবার (১ জুলাই) বাদ জোহর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রথম এবং বাদ আছর কবির গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে কবিকে তার পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত করা হবে।
জানা গেছে, কবি আসাদ বিন হাফিজ ১৯৫৮ সলের ১ জানুয়ারি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আদর্শের দিক থেকে কবি ফররুখ আহমদের অনুসারী কবি আসাদ বিন হাফিজ ছোটবেলা থেকেই ইসলামি সাংস্কৃতিক চর্চায় মন দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় তিনি তার সাহিত্যে বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবের অনুপ্রেরণা প্রকাশ করেছেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ইসলামি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
শৈশবে কবি আসাদ বিন হাফিজ নিজ গ্রাম বড়গাঁও প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করেন এবং বাড়ির পাশের মক্তবে আরবি শেখেন। পরে গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন।
কবির সবচেয়ে বড় ভাই অধ্যাপক ইউসুফ আলী নরসিংদী কলেজে অধ্যাপনা করতেন। কবি সেখানে গিয়ে ব্রাহ্মনদী কলেজিয়েট হাইস্কুলে ভর্তি হন। পরে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন এবং তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ফরিদাবাদ হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই তিনি মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করেন ১৯৭৪ সালে।
ঢাকা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
কবি আসাদ বিন হাফিজ কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনাসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতেই রেখেছেন অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৮১। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘কি দেখো দাঁড়িয়ে একা সুহাসিনী ভোর’ এবং ‘অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার’।
কবি আসাদ বিন হাফিজ তার বর্ণাঢ্য কর্ম ও সাহিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ কলম সেনা পুরস্কার (১৯৯৪), কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এমইউ আহমেদ পুরস্কার (১৯৯৭), বাংলাদেশ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ পুরস্কার (১৯৯৭), ছড়ার ডাক পদক ও সম্মাননা (২০০৪), মেলোডি শিল্পগোষ্ঠী পদক (২০০৪), কিশোর কণ্ঠ ও সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪), গাজীপুর সংস্কৃতি পরিষদ কৃতী সংবর্ধনাসহ (২০০৪) অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ