শুধু পার্বত্যবাসীদের জন্য নয়, সকল বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেছেন, এই শান্তিচুক্তির জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই ইউনেসকো শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি নেই। শান্তি ফিরিয়ে আনতে চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন জরুরি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি’ আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে গণমিছিল বের হয়। পাহাড়ি-বাঙ্গালী সর্বস্তরের জনগণ ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড নিয়ে এই গণমিছিলে অংশ নেয়। মিছিলটি শাহবাগে পৌছে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হলে কী হবে, তা আমরা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি। পার্বত্যবাসীরা এখন ক্রমাগত সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে যেই জঙ্গিদক্ষতা, তাদের কিছু অংশ সেটার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। তাই চুক্তি বাস্তবায়নের এই লড়াইকে যদি আমরা বাংলাদেশের মূল ধারার লড়াইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে না পারি, তাহলে আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারবো না। তাই চুক্তি বাস্তবায়নের লড়াই জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, যেই সরকার চুক্তি করেছিল সেই সরকারের আমলে পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পর চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের রাজপথে দাঁড়াতে হবে- এমনটা কাম্য ছিল না। স্বাধীনতার মাধ্যমে ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল সেই সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে উপনিবেশিক কায়দায় শাসন শোষণ অব্যাহত রয়েছে। সেখানে মানুষর জীবন নিরাপদ নয়, নিরাপত্তাহীনতায় বাস করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাংলার শ্রমিক, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষের লড়াইয়ের মত এই লড়াইটাও সম্পর্কিত ও গুরুত্বপূর্ণ। আজকে পাহাড়ে ঢুকতে গেলে জাতীয় পরিচয় পত্র দেখাতে হয়। সমতলের কোথাও এমন নজির নেই। তাহলে একই দেশে দ্বৈত শাসন হবে কেন বলেও প্রশ্ন রাখেন এই সাবেক সংসদ সদস্য।
আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, মনে রাখা দরকার একদিকে শান্তি চুক্তি করবেন, অন্যদিকে আদিবাসীদেরকে সংখ্যালঘু করতে বাইরে থেকে পাহাড়ে লোক নিয়ে যাবেন তা ঠিক নয়। তিনি সরকারকে অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দেলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেনের সভাপতিতেত্ব সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বেলা’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওানা হাসান, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দেলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উজ্জ্বল আজিম প্রমূখ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ