ভারত বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন করতে সরকারকে কোনো বার্তা দিয়েছে কিনা আওয়ামী লীগের কাছে তা জানতে চেয়ে প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘তলেতলে আপস হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার। দিল্লি আছে, আমরাও আছি’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘দিল্লি কি বলেছে অবৈধ নির্বাচন করতে? পরিষ্কার করে বলেন।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, অতীতের মতো সরকার আবারও একতরফা নির্বাচনের জন্য একটা বাগান সাজিয়েছে। কিন্তু এবার জনগণ ও বিশ্ব সম্প্রদায় এদের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার বিকালে রাজধানীতে এক কনভেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথা বলছিলেন বিএনপি মহাসচিব।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এক কনভেশনের আয়োজন করে। এতে ২২টি পেশাজীবী সংগঠন এই কনভেনশনে অংশ নেয়।
মির্জা ফখরুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিএনপি দুই বছর ধরে রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে, এবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কেউ আঘাত করলে বিএনপি প্রত্যাঘাত করবে না এমনটা নয়। এই আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য বা খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য নয়, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। জাতি আজ একটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দিল্লি আছে আমরাও আছি। দিল্লি কি আপনাদের জানিয়েছে, এভাবে অপকর্ম করতে? দিল্লি কি বলেছে জোর করে একতরফা নির্বাচন করতে? সেটা পরিষ্কার করে বলুন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এতো বেশি পা চাটা হয়ে গেছে যে তাদের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন ভয় নাই, ও রে ভয় নাই –তলে তলে আপস হয়ে গেছে। তাহলে স্বীকার করলেন এতো দিনে আপস ছিল না। আসলে আপনাদের মতো এতো বড় মিথ্যাবাদী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর আগে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন আলোচনা হয়েছে- আসলে কোনো আলোচনা হয়নি। বলেছে বৈঠক হয়েছে- আসলে কোনো বৈঠকও হয়নি। ছবি তোলার জন্য কত লবিং করেছে সেটা আমরা সবাই জানি।
লন্ডনে শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার কথা এত করুচিপূর্ণ, যার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তবে তিনি তার বক্তব্যে কয়েকটি সত্য কথা বলে দিয়েছেন। তা হলো- এদেশে যা কিছু ঘটে তা শেখ হাসিনার ইঙ্গিতে ঘটে। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার স্বীকারোক্তিতে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এতো স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে এদেশে বিচার বিভাগের কোনো প্রয়োজন নাই। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই হলো সিদ্ধান্ত। এখন শেখ হাসিনাকে নিজেকে নিজে সম্রাট ঘোষণা দিলে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। ইতোমধ্যে অমাদের ২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে এ চলমান আন্দোলনে। এখনও আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, কিন্তু একথা বলি নাই- আপনারা বাধা দিলে এ আন্দোলন সব সময় শান্তিপূর্ণ থাকবে।
খালেদা জিয়াকে অনুপ্রেরণা আখ্যায়িত করে ফখরুল বলেন, খালেদা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন গণতন্ত্রে পুনরুদ্ধারের সঙ্গে কোনো আপস নেই, কোনো শর্ত নাই, ১/১১ এর সময় অন্যরা দেশের বাহিরে গেছে। কিন্তু আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া দেশের মাটি ছেড়ে যাননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে সরকার চাইলে আইনে মধ্যে যেকোন নাগরিকের সাজা মওকুফ করে দিতে পারে, কিন্তু তারা এখন মিথ্যাচার করছে। তাহলে আওয়ামী লীগ সরাসরি বললেই তো পারে তারা খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রং হেডেড পারসন (শেখ হাসিনা) অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। তাদের কোনো বৈধতা নেই। তাদের যেমন দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না, গণতান্ত্রিক বিশ্বের মানুষও বলে দিয়েছে তোমাদের আমরা আর বিশ্বাস করি না। যেসব দেশ সারাবিশ্বে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে দেখতে চায়-তারা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়নি ও ২০১৮ সালেও কোনো নির্বাচন হয়নি। এবারও তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। তাদের অধীনের কোনো নির্বাচনকে কখনো বৈধতা দেয়া হবে না।
‘নির্বাচন নির্বাচন করে এবার কোনো লাভ নেই। আগে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এরপর নির্বাচনের কথা আসবে’—যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড মঈন খান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ