বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, যারা নিজেদের দেশে ডিজিটাল বিপ্লবের পথিকৃৎ বলে দাবি করে থাকে, তাদের ওয়েবসাইট গত দশদিন ধরে স্তব্ধ হয়ে আছে।
ইন্টারনেট ব্রাউজারে গিয়ে বিজেপি.ওআরজি সার্ফ করলে যে বার্তাটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে তা এরকম:
‘অসুবিধার জন্য দু:খিত, কিন্তু আসলে আমরা এই মুহুর্তে সাইটের রক্ষণাবেক্ষণে ব্যস্ত আছি। শিগিগরি আবার অনলাইনে ফিরবো।’
কিন্তু সেই গত ৫ মার্চ থেকে এই একই বার্তা সেখানে রয়েছে – আজ দশদিনের ওপর হতে চললো সাইবার দুনিয়াতে বিজেপির ফেরার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না!
আসল রহস্যটা তাহলে কী?
প্রথমে জোরালোভাবে অস্বীকার করলেও বিজেপি নেতারা অবশেষে মাত্র দিনদুয়েক আগে কবুল করেছেন, তাদের সাইট ‘সাময়িকভাবে’ হ্যাক করা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ মঙ্গলবার জানান, “মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য বিজেপির সাইট হ্যাক করা হয়েছিল। তবে আমরা খুব দ্রুতই আবার সাইটের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছি।”
“সমাজে তো আসলে নানা ধরনের ‘রোগ এলিমেন্ট’ থাকেই। এটা তাদেরই কাজ ছিল”, বলেছেন মি. প্রসাদ।
অথচ গত সপ্তাহেই বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেছিলেন, তাদের সাইট মোটেই হ্যাক করা হয়নি।
তিনি বলেছিলেন, তাদের সাইট সামান্য ‘ট্রান্সগ্রেশন’ বা বেআইনি কার্যকলাপের শিকার হয়েছিল।
অমিত মালব্যর দাবি ছিল, তাদের সাইট যে আপাতত ডাউন হয়ে আছে সেটা ‘টেকনিক্যাল গ্লিচে’র (যান্ত্রিক ত্রুটি) কারণে – এর সঙ্গে হ্যাকিংয়ের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।
কিন্তু এখন এটা স্পষ্ট যে বিজেপির সাইট, অল্প কিছুক্ষণের জন্য হলেও, অবশ্যই হ্যাকড হয়েছিল।
‘অ্যানোনিমাস এসকে ফর্টি সেভেন’ নামের আড়ালে একজন স্বঘোষিত সাইবার হ্যাকার গত ৫ মার্চেই টুইট করে জানিয়েছিলেন সে দিন বিজেপির সাইটে হ্যাকাররা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি ‘মিম’ আপলোড করেছিল।
সেই হ্যাকিংয়ের স্ক্রিনশটও তিনি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন।
তাতে দেখা যাচ্ছে, বিজেপির সাইটের প্রচ্ছদে লেখা আছে, “আমার ভাই ও বোনেরা, আমি তোমাদের সবাইকে বোকা বানিয়েছি!”
“ভাই ও বোনেরা, আমরা তোমাদের সবাইকে বুদ্ধু বানিয়েছি। আরও আসছে। অনেক অনেক অভিনন্দন!”
এর একটু পরেই ‘রক্ষণাবেক্ষণের জন্য’ বিজেপির সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে আজ পর্যন্ত তা আর চালু হয়নি।
ইতিমধ্যে ভারতে সোশ্যাল মিডিয়াতে এটা নিয়ে বিপুল হাসি-মশকরা ও ব্যঙ্গবিদ্রূপ শুরু হয়ে গেছে।
আর খুরিয়া নামে একজন টুইটার ব্যবহারকারী বিজেপির উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, “রামমন্দির না ওয়েবসাইট – কোনটা আগে বানাবেন?”
বলিউড ব্লকবাস্টার ‘উরি’-র ‘হাউ ইজ দ্য জোশ’ – এই যে সংলাপটি ইদানীং বিজেপি নেতাদের খুব প্রিয়, সেটা নিয়েও এই অবকাশে ঠাট্টা তামাশা করছেন কেউ কেউ।
‘জেট লি’ (ভাসুলি ভাই) নামের আড়ালে একজন যেমন টুইট করেছেন :
মোদী : হাউ ইজ দ্য জোশ?
বিজেপি ওয়েবসাইট: ডাউন স্যার!
কেউ কেউ আবার লিখেছেন, “বিজেপি তাদের প্রতিশ্রুত ‘আচ্ছে দিন’ আর ওয়েবসাইট – দুটোই ফিরিয়ে আনার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে – কিন্তু পারছে না।
আজকের ভারতে বহু সমস্যার জন্য বিজেপি যেভাবে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে দায়ী করে থাকে, সেই প্রসঙ্গ টেনে অনেকে আবার লিখছেন, কে জানে, হয়তো নেহরুই বিজেপির সাইট হ্যাক করেছেন!
রূপা সুব্রহ্মণ্য নামে একজন টুইটার ব্যবহারকারী আবার গুরুতর একটি প্রশ্ন তুলেছেন।
তার বক্তব্য, এত সময় নিয়েও বিজেপি যদি তাদের অফিসিয়াল সাইট চালু করতে না-পারে, তাহলে (হ্যাশট্যাগ) ডিজিটাল ইন্ডিয়ার নিরাপত্তাগত হুমকি সামলানোর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বৈ কী!
এই সব তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ বা সমালোচনার জবাবেও বিজেপি কিন্তু এখনও জানাতে পারছে না, কবে তাদের সাইট আবার চালু হবে।
ভারতের একটি টিভি চ্যানেল এমনও সন্দেহ প্রকাশ করছে, শুধু হ্যাকিং নয়, বিজেপির সাইট ‘মেগা-হ্যাকিং’য়ের কবলে পড়ে তাদের সব কন্টেন্ট ও তথ্য হারিয়ে ফেলেছে বলেই তা ফেরাতে এত সময় লাগছে!
ঘটনা যেটাই হোক, ভারতের টুইটার দুনিয়া অন্তত কিছুতেই এ কথা বিশ্বাস করছে না যে স্রেফ রুটিন রক্ষণাবেক্ষণের কারণে শাসক দলের ওয়েবসাইট এত দিন ধরে ডাউন হয়ে রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিবিসি বাংলা অনলাইন