শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
চাচাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার! হাইকোর্টের নতুন রেজিস্ট্রার হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী লামায় অগ্নিসংযোগ: ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে উপদেষ্টা-প্রশাসন নসরুল হামিদের ৩৬ কোটি টাকার সম্পদ, অস্বাভাবিক লেনদেন ৩১৮১ কোটি তিন উপদেষ্টাকে বিপ্লবী হতে বললেন সারজিস আলম জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা কোরিয়া থেকে ৬৯৩ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে সরকার সাভারে বন্ধ টিএমআর কারখানা চালুর নির্দেশনা উপদেষ্টার দুদকের সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়ায় কোহলিকে আইসিসির শাস্তি শেখ হাসিনা-শেখ রেহানার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি ফখরুলের ১১ বছর পর দেশে ফিরছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক যারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত প্রাণ এএমসিএলের ৩২ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বাদ যাচ্ছে ১১১৮৬ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বিমানের সিটের নিচে মিলল ২০ সোনার বার, যাত্রী আটক ‘পিলখানা হত্যায় নিরপেক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করা হবে’ চোখের জলে এক বীরকে বিদায় দিল ফায়ার সার্ভিস

দখল হয়ে যাচ্ছে কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের বসতবাড়ি

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৭
  • ২৪৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,খুলনা : ‘এই যে বিটপি-শ্রেণী হেরি সারি সারি কী আশ্চর্য শোভাময় যাই বলিহারি! কেহ বা সরল সাধু-হৃদয় যেমন, ফল-ভারে নত কেহ গুণীর মতোন। এদের স্বভাব ভালো মানবের চেয়ে, ইচ্ছা যার দেখ দেখ জ্ঞানচক্ষে চেয়ে।’ এমন অমর বাণী বইয়ের পাতায় চির অক্ষয় হয়ে থাকলেও যে স্থান থেকে এটি রচিত হয়েছিল সেটি আজ হুমকির মুখে।

ক্রমেই দখল হয়ে যাচ্ছে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের পৈত্রিক বাড়িটি। বাড়িটির চারপাশ দখল করে নিয়েছে ইট বালু ব্যবসায়ীরা। অযত্ন অবহেলায় জীর্ণদশা ভর করেছে বাড়িটিতে। দখলের কবলে কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের স্মৃতিবিজড়িত মন্দিরের জমিও। তার পূর্বপুরুষের ভিটেতে একটি ইনস্টিটিউট হলেও সেটি নামে। তবে প্রভাবশালীদের হাত থেকে বাড়িটি উদ্ধার করে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী গ্রামে বাংলার অমর কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের বাড়ি। বাড়িটির অধিকাংশ এলাকাই এখন স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের দখলে। বসতভিটার কোনো চিহ্নও নেই। এখানে কবির পিতৃপুরুষের যে পুকুরটি ছিল সেটি দখল করে ভরাটের পর উঠেছে পাকা দালান। সামনের মাঠের দুই প্রান্তে দুটি প্রায় শতবর্ষী মন্দিরও জরাজীর্ণ। কবির বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে একটি কামিনী গাছ বর্তমানে আর নেই। সে স্থানে ব্যবসায়ীরা ইটের স্তুপ গড়ে তুলেছেন। কবির রচিত অনেক কবিতাই তিনি সেখানে বসে রচনা করেছেন। সেখানে বর্তমানে একটি স্মৃতিফলক রাখা রয়েছে। যেখানে লেখা রয়েছে ‘বাংলার অমর মঙ্গল কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার এর প্রিয় কামিনী ফুল গাছের স্মৃতি রক্ষার্থে দ্বিতীয় গাছটি রোপণ করেন এসএম ফিরোজ আলম, জেলা প্রশাসক খুলনা।’

২০০৮ সালে স্থাপিত স্মৃতি ফলকটিও আজ ভেঙে এমন অবস্থা হয়েছে যেটি না দেখার মতোই অবস্থা। কবির স্মৃতি রক্ষার্থে মন্দিরের জন্য নিজ ছেলের দান করা জমি এখন চলে গেছে অবৈধ দখলে। মন্দিরটি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলেও মন্দিরের ভাসান ঘাটে (প্রতিমা ভাসানোর ঘাট) তৈরি করা হয়েছে পাকা স্থাপনা। স্থানীয় ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একটি চক্রকে মূল্যবান এ জমি ডিসিআরের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্দির এবং জমি উদ্ধারের জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদনও করা হয়েছে।

মন্দিরের জমি অবৈধ দখলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিববাড়ী পূজা মন্দির পরিচালনাকারী সংগঠন হিন্দু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র দত্ত বলেন, জমি দখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, মন্দিরের নিজস্ব জমি হওয়া সত্ত্বেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মন্দিরের নামে জমি ডিসিআর কাটতে বলেন। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ সেটি করেননি। তিনি অবিলম্বে অবৈধ দখলমুক্ত এবং নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্বদেশ ও মানবপ্রেমের কবি কৃষ্ণচন্দ্রের জন্ম ১৮৩৪ সালের ১০ জুন। তার পিতার নাম মাণিক্যচন্দ্র মজুমদার। মাতা ব্রহ্মময়ী মজুমদার। কৃষ্ণ পক্ষে কবির জন্ম তাই কবির নাম রাখা হয়েছিল কৃষ্ণচন্দ্র। কবির গুপ্ত নাম ছিল রামকৃষ্ণ দাস। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫টি। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সদ্ভাবশতক ‘মোহভোগ’ ‘কৈবল্যতত্ত্ব’ উলে¬খযোগ্য। শেষ বয়সে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার নিদারুণ অর্থ কষ্টে থাকলেও অত্যন্ত সৎ জীবন যাপন করতেন তিনি। এ নিয়ে রয়েছে একাধিক উদাহরণ। একবার ভৈরব নদী পার হওয়ার জন্য খেয়াঘাটে এসে দেখলেন নৌকা আছে মাঝি নেই। মাঝির অবর্তমানে সবাই মিলে খেয়া পার হয়ে যে যার মতো চলে গেলেও একমাত্র কবিই মাঝির অপেক্ষায় বসেছিলেন। শেষ বয়সে কবি বাড়ির সামনে তার প্রিয় দুটি কামিনী ফুল গাছের নিচে ধ্যানমগ্ন হয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে গেছেন। এর আগে সেখানে বসে রচনা করেছেন কবিতা। ১৯০৭ সালে ৬ জানুয়ারি কবি জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কবিরাজের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলেও এর সাতদিন পর অর্থাৎ ১৯০৭ সালের ১৩ জানুয়ারি সকালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত কবিদের মধ্যে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের রচনাবলী বাংলা সাহিত্যের এক বিশেষ দিক নির্দেশনা। কবির শেষ সময়ের বিষন্নতা আজ কবিপ্রেমীদের মনে। যেখানে নেই কবির সেই প্রিয় ফুলগাছ, বসতভিটা আর সেই মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি। বর্তমানের কোলাহলে ভক্তরা খুঁজে পায় না সেই সুর। সেখানে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র ইনস্টিটিউটটিও আজ অন্তঃসারশূন্য।

বাংলা৭১নিউজ/এম

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com