বাংলা৭১নিউজ, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বামনকান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর জনৈক শিক্ষার্থী ইন্দ্রজিত সরকারকে বিদ্যালয় শ্রেনীকক্ষে তুচ্ছ একটি ঘটনার জের ধরে অমানুষিক শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালিয়েছে এলাকার কথিত আওয়ামী লীগ নেতা হায়দার মাতুব্বর। ওই ব্যাক্তি শিশুটিকে শ্রেনীকক্ষ থেকে টেনে হিচড়ে গলা টিপে ধরে পিটিয়ে তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে চিৎকার করে অমানবিক নির্দয়ভাবে পিটিয়ে ধারাল অস্ত্র নিয়ে জবাই করবে বলে হুমকি দেয়। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্থানীয় লোকজন গিয়ে শিশুটিকে উদ্বার করে।
এ ঘটনায় শিশুটি ভয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। গত শনিবার ওই বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গ্রামের অসংখ্য মানুষের সম্মুখেএ ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, উপজেলার বিশরীকান্দা গ্রামের কথিত আওয়ামী লীগ নেতা হায়দার মাতুব্বরের মেয়ে হিরামনি এ্যামিলি ১ম শ্রেনী এবং একই গ্রামের কাঠমিস্ত্রিী রঞ্জিত সরকারের ছেলে ইন্দ্রজিত সরকার দ্বিতীয় শ্রেনীতে বিদ্যালয়টিতে পড়াশুনা করে। শনিবার বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে মাঠে খেলাধুলা করার সময় ওই দুই শিশুর মধ্যে অসতর্কতাঃবশত শরীরে ধাক্কা লাগে। এতে হায়দার মাতুব্বরের শিশুকন্যা চোখে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়। শিশুটি গিয়ে তার পিতা হায়দার মাতুব্বরকে জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ে এসে উচ্চস্বরে গালিগালাজ করে ইন্দ্রজিতকে খুঁজতে থাকে।
এক পর্যায়ে শিশু ইন্দ্রজিতকে পেয়ে শ্রেনীকক্ষ থেকে গলাটিপে ধরে পিটাতে পিটাতে তার নিজ বাড়ীতে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতন কর্।েঘটনার আকস্মিকতায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গ্রামের লোকজন দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে উদ্বার করে।
এ সময় হায়দার চিৎকার করে বলে যে, এ বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তাকে জ্যান্ত পুতে ফেলা হবে। নির্যাতিত শিশুটি দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় কেউ উচ্চবাচ্চ করেনি।
পরে বিদ্যালয়টির সভাপতি আলহাজ্জ মজিবর মুন্সী, সাধারন সম্পাদক ফারুক খান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আকলিমা খাতুন বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলামকে জানালে তিনি সামাজিকভাবে মিমাংসার জন্য শিশু দুটির অভিভাবকসহ গন্যমান্য ব্যাক্তিদের তার নিজ অফিসকক্ষে ডাকেন। গত রবিবার বিকেলে এ নিয়ে নির্যাতিত শিশুটির পক্ষের লোকজন উপস্তিত হলেও অভিযুক্ত হায়দার মাতুব্বর উপস্থিত হননি। হায়দারের সাথে গন্যমান্য ব্যাক্তিরা মোবাইলফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমি অনেক দুরে আছি। মীমাংসার সময় নেই, আপনারা যা পারেন করেন গিয়ে।
বিষয়টির বিবরন দিয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা আকলিমা খাতুন বলেন, বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটার পর শিক্ষক ও স্থানীয়রা হায়দার মাতুব্বরে বাড়ীতে গিয়ে শিশুটিকে উদ্বার করি। বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ও শিক্ষকরা মিলে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলামকে জানাই ।যে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছে, শিক্ষক হিসেবে আমি এটা মেনে নিতে পারিনা।
প্রত্যক্ষদর্শী মাইনদ্দিন খান ও ইদ্রিস মুন্সী বলেন ঘটনাটি খুবই অমানবিক ও ন্যাক্কারজনক।সামান্য তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে একটি শিশুকে যেভাবে নির্যাতন করেছে, এটা খুবই বর্বরতা।
গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি বলেন,হায়দার মাতুব্বর একজন অসামাজিক লোক। সে নিজেকে আওয়ামীলীগের নেতা,আওয়ামীলীগের বড় নেতার আতœীয় এবং দুদকের কর্মকর্তা বলে দাবী করে পেশীশক্তি প্রদর্শন,এলাকায় মানুষকে চাকুরী দেয়া,বিদেশে পাঠানোর নাম করে বহু মানুষকে সর্বসান্ত করেছে।তাছাড়া সে ইতপুর্বে এলাকায় ঝগড়াবিবাদ করে কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে হায়দার মাতুব্বরের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন,“আমি দুদকে চাকুরী করি, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমার স্ত্রী আওয়ামী যুব মহিলা লীগের নেত্রী। আমাকে সবাই চেনে, এটা কোন বিষয় না, ভেবে চিন্তে কাজ করেন।”
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাকে জানানোর পর সামাজিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছি, অভিভাবক গন যদি শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা না করে তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অভিযুক্তের সন্তানকে বিদ্যালয়ের ছাড়পত্র প্রদান করা হবে, যাতে সে কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস