সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে বাণিজ্যিকভাবে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। বিশেষ করে অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে ফলটির আবাদ। প্রথমবারের মতো মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় চাষকৃত হলুদ, কালো ও সবুজ তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। আশানুরূপ ফলনে অধিক লাভের আশায় হাসি ফুটেছে কৃষকদরে মুখে।
তালা উপজেলার নগরঘাটা, ফুলবাড়ি, অভয়তলা, ভায়ড়াসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় গ্রীষ্মকালীন হলুদ, কালো ও সবুজ তরমুজ চাষ করছেন চাষিরা। টুঙ্কিনারী, বুলেট কিং ও কানিয়া (বাংলালিঙ্ক) জাতের এসব তরমুজ কোনোটি বাজারজাতের সময় হয়েছে, কোনোটি এখনো জালি। তবে, এসব তরমুজ খেতে অনেক সুস্বাদু বলে দাবি করেছেন চাষিরা।
তরমুজ চাষিরা জানান, উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় অধিক লাভের আশায় তালা উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছে গ্রীষ্মকালীন হলুদ ও কালো তরমুজ চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলার মাটি তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে আবাদ।
তরমুজ চাষে সবমিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাইকাররা এসে দরদাম করে যাচ্ছেন তরমুজের। তারা ৩৫-৪০ টাকা কেজি দিতে চায়। এ হিসেবে বিঘা প্রতি অন্তত দেড় থেকে ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষক। এতে অন্যান্য ফসলের তুলনায় কমপক্ষে ছয় গুণ লাভ হবে।
তালার বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষি বিভাগের প্রধান কৃষিবিদ নয়ন হোসেন বলেন, কৃষক পর্যায়ে তরমুজের বীজ, সারসহ সবধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অধিক লাভ হওয়ায় প্রতিবছর আবাদ বাড়ছে। কৃষকেরা ভালো লাভ পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, পিকেএসএফের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টা থেকে বীজ সংগ্রহ করে তাদের পরামর্শে মালচিং পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে তরমুজের আবাদ করছেন কৃষকরা।
তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের মাসুদ হোসেন, আব্দুল মতিন মাস্টার, আসাদুর রহমান, হাফিজুর রহমান, অভয়তলা গ্রামের আহসান হাবিব, বগা গ্রামের ফারুক হোসেনসহ একাধিক তরমুজ চাষি জানান, তরমুজ চাষ করছি আমরা। এজন্য মে মাসের শেষ সপ্তাহে বীজ রোপণ করি। ইতোমধ্যে আমাদের ক্ষেত তরমুজে ভরে গেছে। তরমুজ বিক্রি শুরু করেছি।
কৃষরা জানান, আমরা প্রথমে একটু সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেও এখন দেখছি তরমুজ চাষ অত্যন্ত লাভজনক।
তেতুলিয়া গ্রামের শিপন বিশ্বাস, সাইফুল বিশ্বাস, শরিফুল বিশ্বাস জানান, তারা তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
তালা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশ জানান, কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রথমবারেই তারা উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছেন। আশা করি মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের প্রযুক্তি আরও সম্প্রসারিত হবে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা জেলায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। তালায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সাফল্য বেশি পাওয়া গেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত বছর সাতক্ষীরায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ হয়েছিল ৮ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর চাষ হয়েছে ২৭ হেক্টর জমিতে। আগামীতে এই ফলের চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করছি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ