সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে গুম করা হয় আলোচিত ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে। এই ভয়াবহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। গতকাল রবিবার এসব কথা বলেন ফটো সাংবাদিক কাজল। ২০২০ সালের ১০ মার্চ কাজলকে গুম করা হয়।
৫৩ দিন পর যশোরের বেনাপোলের একটি খালে তার সন্ধান মেলে। গতকাল রবিবার নিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব তথ্য দেন।
শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, গুম নিয়ে অনেক মানুষ মিথ্যাচার করছে। গুমের ডাক আল্লাহ শুনেছেন বলেই শেখ হাসিনার পতন হয়েছে।
সিগন্যালে (ইশারা) গুম করা হয়। এটা একটি চেইন (প্রক্রিয়া)। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার দপ্তরের মঞ্জিল নামের একজন পিএস (আর্মি অফিসার) ছিলেন, তিনি অনেক কিছু জানেন।
জানা যায়, গুমের ঘটনায় কাজলের সন্ধানের পরও তার ওপর থামেনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখরসহ আরও দুজনের করা তিনটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় তাকে কারাগারে থাকতে হয়। পরে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
গুমের বছরই নানা চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে ২৫ ডিসেম্বর জামিন পান তিনি। জামিন পেলেও নিরাপত্তার কথা ভেবে তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
এর আগে ২০২০ সালের ১০ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে থেকে কাজলকে গুম করা হয়। তারপর জম টুপি পরিয়ে মাটির নিচের কোনো অজ্ঞাত স্থানে তাঁকে নেওয়া হয়।
নির্যাতনের কথা বললে এখনো আঁতকে ওঠেন সাংবাদিক কাজল। স্বাভাবিক জীবনে হয়তো ফেরা হবে না জানিয়ে এই ফটো সাংবাদিক বলেন, ‘আমাকে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেখানে কোনো মানুষকে রাখা যায় না। আমার ডান পায়ে অনেক সমস্যা, সার্জারি করা লাগবে। আমি হাঁটতে পারি না, কোমরেও সমস্যা, চোখেও কম দেখি।
কারণ, গুমের ৫৩ দিনই আমার চোখ বাঁধা ছিল। আমি গুমকারীদের পরিপূর্ণ তালিকা এখনো কোথাও দিইনি। তবে আমার গুমের সঙ্গে যারা জড়িত আমি তাদের চিনি এবং প্রমাণ করতে পারি।’
সাংবাদিক কাজল আরো বলেন, ‘আমার সঙ্গে এবং অসংখ্য মানুষের সঙ্গে যা হয়েছে তার ন্যায্যবিচার চাই।’
প্রসঙ্গত, শফিকুল ইসলাম কাজল ফটো সাংবাদিক হিসেবে বণিক বার্তা ও খবরের কাগজে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ‘পক্ষকাল’ নামে একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনার পাশাপাশি বিগত সরকারের নানা অনিয়ম নিয়ে ফেসবুকে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। বিশেষ করে পাপিয়া কেলেঙ্কারিতে জড়িত কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির তথ্য ও ছবি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ